প্রিয় বন্ধুরা, আজ আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করব "জার্মানিতে হিটলারের উত্থান এবং নাৎসি দলের মূল্যায়ন করো' -এই প্রশ্নটি। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন, প্রায়ই পরীক্ষায় এসে থাকে।
হিটলারের উত্থান এবং নাৎসি দলের মূল্যায়ন -
উলফ গ্যাং ক্যাপ-এর বিদ্রোহ ঃ ভাইমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর এই সরকার নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে। এই সরকার জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে -- এমন একটি কথা জনগণের কাছে রটে যায়। একদিকে যেমন ভার্সাই সন্ধি জার্মানিকে পঙ্গু করেছিল, অপরদিকে তেমনই চরম দক্ষিণপন্থী এবং চরম বামপন্থী দল এই সরকারকে কোন সহযোগিতা না করে বরং বিরোধিতা করেছিল ফলে এই সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাছাড়া জার্মানির সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোন আনুগত্য ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির একজন সেনাপতি উলফ গ্যাং ক্যাপ-এর নেতৃত্বে জার্মানিতে নৌ বিদ্রোহ শুরু হয় এবং তিনি রাজধানী বার্লিন দখল করে নেন। এরপর উলফ গ্যাং ক্যাপ জার্মানিতে প্রজাতন্ত্র বিরোধী একটি সরকার গঠন করেছিলেন। এরই মধ্যে জার্মানিতে নাৎসি দল তাদের ক্ষমতা বাড়িয়েছিল এবং তারা ক্যাপ-এর সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল।
বামপন্থীদের বিদ্রোহ ঃ এই সময় কমিউনিস্টরা ব্যাভেরিয়া অঞ্চল দখল করে নেয়। কিন্তু হিটলারের নাৎসি বাহিনী তা আবার পুনর্দখল করে এবং এই সাফল্যের ফলেই নাৎসি দল জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
মুদ্রাস্ফীতি ঃ ভার্সাই চুক্তির পরে জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সমগ্র জার্মানি জুড়ে দেখা দেয় মুদ্রাস্ফীতি। এই মুদ্রাস্ফীতির জন্য কোন কোন ঐতিহাসিক ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতনকে দায়ী করেছেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পাউন্ড এবং জার্মান মার্কের মধ্যে বিনিময় হার ছিল ১ পাউন্ড সমান ৭৬০ জার্মান মার্ক। সাধারণত এরকম কোন অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যে যেকোন রাষ্ট্রের টীকে থাকা অসম্ভব হয়ে যায় কিন্তু সাময়িক ভাবে ভাইমার প্রজাতন্ত্র টীকে ছিল।
স্ট্রেসম্যানের কৃতিত্ব ঃ জার্মানির এই সংকটময় পরিস্থিতিতে জার্মানির হাল ধরেন স্ট্রেসম্যান। জার্মানির এই বিশাল ক্ষতিপূরণ মেটানোর জন্য তিনি ডাওয়েজ পরিকল্পনা, লোকর্ণো চুক্তি, প্যারিসের চুক্তি, ইয়ং পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি করেন। এর ফলে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু স্ট্রেসম্যানের মৃত্যুর পর সমগ্র জার্মানিতে আবার অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নাৎসিদল এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছিল।
নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা ঃ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সমগ্র বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা দেখা দিলে এর প্রভাব জার্মানিতেও পড়ে। এই সময় জার্মানিতে বেকারত্ব, অর্থনৈতিক দুর্দশা ইত্যাদি মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গিয়েছিল। দমনমূলক ভার্সাই চুক্তির প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে হিটলার তার প্রভাব বাড়াতে থাকে। হিটলার জার্মানির যুবক এবং যুদ্ধফেরত সৈন্যদের নিয়ে একটি আধাসামরিক সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন, যার নাম ছিল "ঝটিকা বাহিনী"। হিটলার জার্মানির বেকার শ্রেণিকে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলে তারা হিটলারের সমর্থনে এগিয়ে আসে।
হিটলারের ক্ষমতা লাভ ঃ এরপরের নির্বাচনে হিটলারের নাৎসিদলের ১০৭ জন নির্বাচিত হয় এবং এর ফলে হিটলার হয় দেশের প্রধানমন্ত্রী। হিটলার ঠিক এটাই চাইছিলেন। হিটলারের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার কিছুদিন পর দেশের রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবার্গের মৃত্যু হয় এবং হিটলার নিজেকে জার্মানির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয় পদে নিয়োগ করেন। এইভাবে জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে আর এডলফ হিটলারের নাৎসি দলের নেতৃত্বে জার্মানিতে তৃতীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।
আরও পড়ুন ঃ