প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করব "বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) সম্পর্কে আলোচনা করো" -এই প্রশ্নটি নিয়ে। প্রশ্নটি ষষ্ঠ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞানে যারা DSE -তে পড়াশোনা করছ তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) -
1947 খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা নামক শহরে বিশ্বের 23 টি মিলে GATT নামক একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। 1994 সাল নাগাদ GATT অর্থাৎ General Agreement on Tariffs and Trade এর সদস্য সংখ্যা 114 -তে দাঁড়ায় এবং পরবর্তীকালে আরও অনেক দেশ এই GATT চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। 1991 খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে GATT -এর তদানীন্তন ডিরেক্টর আর্থার ডাঙ্কেল একটি খসড়া তৈরি করেন, যাকে ডাঙ্কেল প্রস্তাব বলা হয়। ডাঙ্কেল প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে একটি নতুন সংস্থা তৈরি হয় যার নাম "বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা" বা WTO ( World Trade Organization).
বৈশিষ্ট্য ঃ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার যে প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল -
(i) WTO হল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাথে এই সংস্থার কোন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।
(ii) WTO -এর অন্তর্গত সকল সদস্য দেশের ভোট দানের সমান অধিকার আছে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাঙ্ক বা আন্তর্জাতিক মুদ্রাভাণ্ডারের ক্ষেত্রে প্রদত্ত চাদার ভিত্তিতে একটি দেশের ভোটের মূল্য নির্ধারন করা হয়। সুতরাং, এই সংস্থাগুলির তুলনায় WTO অনেক বেশি গণতান্ত্রিক।
(iii) GATT চুক্তির শর্তগুলি মেনে চলা সদস্য রাষ্ট্র গুলির পক্ষে বাধ্যতামূলক ছিল না কিন্তু WTO -এর অধীন চুক্তি গুলিকে সদস্য রাষ্ট্র গুলি মানতে বাধ্য।
(iv) GATT -এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পারিক বিরোধ মীমাংসার কোন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু WTO -এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পারিক বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি শাখা রয়েছে। সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলি এই শাখার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য।
(v) এককথায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) হল GATT এর উত্তরসূরি। আসলে GATT প্রকৃতপক্ষে কোন সংগঠন ছিল না, এটি ছিল একটি চুক্তি মাত্র। কিন্তু WTO হল একটি বৈধ সত্তাবিশিষ্ট স্বতন্ত্র স্থায়ী সংস্থা।
উদ্দেশ্য ঃ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) গঠন করার উদ্দেশ্যগুলিকে নিন্মে তুলে ধরা হল -
(i) বিশ্ব যে পরিমাণ সম্পদ আছে তার সর্বাধিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।
(ii) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈষম্য মূলক আচরণের বিলোপ সাধন ঘটানো।
(iii) WTO -এর অধীন সদস্য দেশ গুলির জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। পাশাপাশি পূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং পণ্য উৎপাদন ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানো।
(iv) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কের বেড়াজাল অপসারণ করা এবং মুক্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরি করা।
(v) সমগ্র বিশ্বব্যাপী একটি নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
(vi) স্বল্পোন্নত দেশগুলি যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারে তার সুব্যবস্থা করা।
কার্যাবলী ঃ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা নিন্মলিখিত কাজগুলি সম্পন্ন করে -
(i) WTO তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিরোধ মীমাংসার কাজ করে থাকে।
(ii) WTO-এর চুক্তিতে বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি পর্যালোচনা করার যে কর্মপদ্ধতি স্থির হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) তার প্রয়োগ ঘটাবে।
(iii) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মকানুন গুলি রুপায়িত করার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলেছে।
(iv) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বিশ্ব বাণিজ্যের ব্যাপারে একটি পরামর্শদানকারী সংস্থা হিসাবে কাজ করে। এই সংস্থার অধীনে যেসব অর্থনীতিবিদরা রয়েছেন তারা বিশ্ব অর্থনীতির গতি প্রকৃতির দিকে নজর রাখে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।
(v) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একটি সচিবালয় রয়েছে, যার কাজ উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত গুলি রুপায়নের কাজে যথাযথ সাহায্য প্রদান করা।
(vi) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শর্তগুলি রুপায়নের জন্য এবং বহুপাক্ষিক চুক্তি বিস্তারের জন্য এই সংস্থা সচেষ্ট হবে।
মূল্যায়ন ঃ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির এবং সামগ্রিক ভাবে গোটা বিশ্ব বাণিজ্যের ওপর নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে, তবেই বিশ্ব অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটবে।
আরও পড়ুন ঃ
➤ বর্তমান যুগে ভারতে বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা করো।