জননীতি সম্পর্কিত এলিট তত্ত্ব আলোচনা করো


১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় জননীতির গুরুত্বকে স্বীকার করা হয়। অধিবেশনে জননীতি বিষয়ক আলোচনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের বক্তব্য, অভিমত, মূল্যায়ন কি হওয়া উচিত সেই বিষয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। ১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Policy Studies Organization প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের জননীতি পর্যালোচনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জননীতি পর্যালোচনা দুই ধরণের হয়ে থাকে। একটি হল জননীতির বিষয়গত পর্যালোচনা। এই দিকটিতে পরিবেশ, জনকল্যাণ, শিক্ষা, নারীদের উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এবং এর অন্য দিকটি হল জননীতির তাত্ত্বিক দিক। 



জননীতি পর্যালোচনা ঃ জননীতি পর্যালোচনা দুভাবে করা সম্ভব। প্রথমটি জননীতির প্রক্রিয়াগত পর্যালোচনা এবং তার রুপায়ন। এই আলোচনাটি মূলত বর্ণনাত্মক। দ্বিতীয় ধরণের আলোচনাটি হল জননীতিকে প্রভাবের দিক থেকে পর্যালোচনা। এক্ষেত্রে জননীতির উন্নতি কীভাবে সম্ভব টা আলোচিত হয়।

এলিট তত্ত্ব ঃ এলিট তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন দুজন ইতালীয় সমাজ বিজ্ঞানী Vilfredo Pareto এবং Mosca. তাদের বক্তব্য অনুসারে সমাজে যারা বিশেষ বিশেষ গুণে মণ্ডিত এবং যারা সাধারণ মানুষ থেকে শ্রেষ্ঠতর তারা এলিট শীর্ষজন হিসাবে বিবেচিত। তারা সাধারণ মানুষ বা নন-এলিট থেকে ভিন্ন। সমাজের ক্ষমতা সবসময় তাদের হাতে থাকে। তবে সমাজে এলিট গোষ্ঠীর পরিবর্তন ঘটে।  এক ধরণের এলিটের পরিবর্তে অন্য ধরণের এলিটের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু সমাজে এলিটদের প্রভুত্ব থেকেই যায়। 


বহুত্ববাদ ঃ পশ্চিমের গণতান্ত্রিক সমাজে ক্ষমতার বিন্যাস বোঝানোর জন্য এই তত্ত্বটি ব্যবহার করা হয়। শিল্পভিত্তিক যা আধুনিক সমাজে বহু ধরণের গোষ্ঠী এবং তাদের বহুধরণের স্বার্থ তৈরি হয়। ফলে কোন একটি গোষ্ঠী তাদের প্রভুত্বকে সমাজের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না বা বিভিন্ন গোষ্ঠী মিলে একক এলিট তৈরি করতে পারে না। 

বহমানতা ঃ ক্ষমতা নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা করেছেন মিশেল ফুকো। ফুকোর মতে অন্যদের ওপর কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠীর প্রভুত্বকে ক্ষমতা হিসাবে দেখা উচিত নয়। ক্ষমতা শিকলের মতো নয়। প্রতিটি মানুষ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। ক্ষমতা সমাজের মধ্যে প্রবাহিত হয় চিহ্নের মাধ্যমে, ভাষার মাধ্যমে এবং নিয়মের মাধ্যমে।


এলিট মেথড / মডেল ঃ এই মডেল অনুযায়ী ধরে নেওয়া হয় যে, সমাজ উল্লম্ব ভাবে বিভাজিত। একদল রয়েছে যারা রাজনৈতিক ক্ষমতা উপভোগ করে এবং প্রয়োগ করে, এরা এলিট শ্রেণি। অপরদিকে রয়েছে সাধারণ জনগণ, যাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। এলিট শ্রেণির সদস্যদের মূল্যবোধ, চিন্তাভাবনা, পছন্দ-অপছন্দ একই ধরণের এবং সেগুলো সাধারণ জনগণের থেকে স্বতন্ত্র। জননীতির উপর থেকে নীচে পর্যন্ত সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানো যায়।


চিত্র  ➤  এলিট-সাধারণ মডেল


     এই মডেল মনে করে যে, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী কর্তৃত্ব যে পরিবেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেই পরিবেশের সক্রিয়তা দেখা যায় না। ফলে নির্জীব জনগণকেই নিয়ন্ত্রণ করে এলিট শ্রেণি। এই এলিট শ্রেণি যে নীতিগুলি গ্রহণ করে তাতে সামগ্রিক ভাবে তাদের নিজস্ব নীতির প্রতিফলন ঘটে। যে নীতিগুলো এলিট শ্রেণি গ্রহণ করে তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল স্থিতাবস্থা বজায় রাখা।

Post a Comment

Previous Post Next Post