আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করব "সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে বিভিন্ন বৈদেশিক সভ্যতার সম্পর্ক কেমন ছিল (What was the relation of different foreign civilizations with Indus civilization?) -এই প্রশ্নটি নিয়ে।
সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে বৈদেশিক সভ্যতার সম্পর্ক -
দয়ারাম সাহানি এবং রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বিশ্বের প্রথম নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা সিন্ধুর আবিষ্কার ঘটেছিল ১৯২১-১৯২২ খ্রিস্টাব্দে। বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অধিকার করে আছে এই সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা। সিন্ধু অঞ্চলে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমানের ভিত্তিতে ঐতিহাসিকরা অনুমান করেছেন যে, সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার সাথে বিশ্বের বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার বাণিজ্যিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। ব্যবসায়ীক আদানপ্রদানের ওপর ভিত্তি করে সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে তৎকালীন সুমের, মিশর এবং মেসোপটেমিয়া সভ্যতার বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায়।
সিন্ধু সভ্যতার বাণিজ্য ঃ এই সময় একটি বাণিজ্যিক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল। যার নাম ছিল 'পণী'। এই বাণিজ্য গোষ্ঠীর বণিকরা শুধুমাত্র সিন্ধু অঞ্চলের মধ্যেই তাদের বাণিজ্যকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, তারা ভারতের বাইরেও বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিত। ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড বলেছেন সিন্ধু সভ্যতার বণিকরা ভারত থেকে পণ্যসামগ্রী নিয়ে গিয়ে টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদী অতিক্রম করে তাদের বাণিজ্য পরিচালনা করত। গুজরাটের ভোগাবো নদীর তীরে লোথাল অঞ্চলে বিশ্বের প্রথম সামুদ্রিক বন্দর আবিষ্কৃত হয়েছে। সিন্ধু যুগে এই বন্দরের মাধ্যমেই সমস্ত বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হত। মেসোপটেমিয়ায় সিন্ধু অঞ্চলের অনেক সিল পাওয়া গেছে, যা থেকে এটি সহজেই বোঝা যায় যে, এই সময় সমুদ্রপথে সিন্ধু এবং মেসোপটেমিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন ঃ ⇩
➤ সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ঃ সিন্ধু যুগে জলপথ এবং স্থলপথে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য চলত। মিশর, সুমের, মেসোপটেমিয়া প্রভৃতি দেশের সাথে সমুদ্র পথে চলত বাণিজ্য। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সাথে স্থলপথে চলত।
আমদানি-রপ্তানি দ্রব্য ঃ সিন্ধুর ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে তুলা, কাপড়, হাতির দাঁত, তামা প্রভৃতি দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করতেন এবং সোনা, রূপা, সিসা এবং দামী পাথর সহ আরও অন্যান্য দ্রব্য সেযুগে আমদানি করা হত। সিন্ধু যুগে মুদ্রার প্রচলন ছিল কি না সে সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য জানা যায়নি, তবে ঐতিহাসিকদের মতে এই সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যম ছিল বিনিময় প্রথা।
সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ঃ ব্যবসা বাণিজ্যের হাত ধরে এই সময় সিন্ধু অঞ্চলের সাথে বিভিন্ন বৈদেশিক সভ্যতার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। ভারতের বণিকরা মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে তাদের উপনিবেশ গঠন করেছিল, একইভাবে সুমের অঞ্চলের বিভিন্ন নিদর্শনের খোঁজ সিন্ধু অঞ্চলে মিলেছে। হরপ্পার মানুষেরা সুমেরীয় সভ্যতার মৃৎপাত্র, সিলমোহর ইত্যাদি ব্যবহার করত এবং হরপ্পার নকশা করা রঙিন মাটির পাত্র ব্যবহার করত সুমেরীয়রা - এমনটাই মনে করেন ঐতিহাসিকরা। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্য নির্মাণের ক্ষেত্রে সিন্ধু সভ্যতার সাথে বিভিন্ন বৈদেশিক সভ্যতার প্রযুক্তির আদানপ্রদান ঘটেছিল।
সবশেষে বলা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতার সাথে সেই সময় বিভিন্ন উন্নত সভ্যতার বাণিজ্যিক সম্পর্কে গড়ে উঠেছিল, যার থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে সেই সময় সিন্ধু সভ্যতা কতটা উন্নত ছিল। যাই হোক বিভিন্ন বৈদেশিক সভ্যতার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ফলে একদিকে যেমন সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক উন্নতি, সাংস্কৃতিক উন্নতি ঘটেছিল অন্যদিকে তেমনই এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক সিন্ধু সভ্যতাকে বিশ্বের ইতিহাসে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে, এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন ঃ
➤ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় বিদেশি সাহিত্যের ভূমিকা কি ছিল