কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী -
কমিশন গঠন ঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩১৬ নং ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন গঠিত হয়েছিল। এতে ছিল একজন সভাপতি এবং অন্যান্য কয়েকজন সদস্য। সভাপতি ব্যতীত কমিশনের অন্যান্য সদস্য সংখ্যা কত হবে তা নির্ধারণ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতি দ্বারাই কমিশনের সভাপতি এবং অন্যান্য সদস্যরা নিযুক্ত হন। কমিশনের সভাপতি এবং অন্যান্য সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর। তবে কারকাল শেষ হওয়ার পূর্বে যদি কারও ৬৫ বছর বয়স হয়ে যায়, তাহলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতি তাদের পদচ্যুত করতে পারেন, তবে তার জন্য বিশেষ কিছু কারণ থাকে।
স্বাধীনতার রক্ষাকবচ ঃ ভারতীয় সংবিধানে কতগুলি রক্ষাকবচের কথা উল্লেখ করা আছে। যার উদ্দেশ্য কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের সদস্যদের নিরপেক্ষতা অবলম্বন। এই রক্ষাকবচগুলি হল -
(i) কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের সদস্যদের নিযুক্ত করার পর এমন কোন শর্ত পরিবর্তন করা যাবে না যা তাদের স্বার্থের পরিপন্থী হয়।
(ii) বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে কমিশনের সদস্যদের পদচ্যুত করতে হয়।
(iii) কমিশনের সদস্যদের বেতন এবং ভাতা দেওয়া হয় সঞ্চিত তহবিল থেকে যা পার্লামেন্টের অনুমোদন সাপেক্ষ নয়।
(iv) কমিশনের সদস্যরা অবসরের পর কোন প্রকার সরকারি চাকরি করতে পারে না।
ক্ষমতা ও কার্যাবলী ঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩২০ নং ধারা অনুসারে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন নিন্মোক্ত কাজগুলি সম্পন্ন করে -
(i) পরীক্ষা গ্রহণ ঃ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শূন্যপদগুলি পূরণের জন্য কমিশন পরীক্ষার ব্যবস্থা করে।
(ii) নিয়ম তৈরি ঃ বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশন বিভিন্ন নিয়ম তৈরি করে এবং নিয়মগুলি কার্যকর করার জন্য রাজ্যগুলিকে সাহায্য করে থাকে। সরকারি কর্মচারীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে বাছাইয়ের জন্য কমিশন বিভিন্ন নিয়ম তৈরি করে।
(iii) পরামর্শ প্রদান ঃ কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ প্রদান করার মাধ্যমে সাহায্য করে থাকে। যেমন -
(a) অসামরিক চাকরি ও পদসমূহের নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতি, বদলির নিয়ম, শৃঙ্খলা ইত্যাদি।
(b) কর্মরত অবস্থায় কোন অসামরিক কর্মচারী আহত হলে তার পেনশনের দাবি।
(c) কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন মামলার ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়।
বার্ষিক প্রতিবেদন ঃ প্রতিবছর কমিশন কি কি কাজ করেছে, সরকারের কোন কোন পরামর্শ কমিশন গ্রহণ করেছে, কমিশনের কোন কোন পরামর্শ সরকার গ্রহণ করেছে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে একটি লিখিত প্রতিবেদন কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেন। ঐ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পার্লামেন্টে গৃহীত হয়।
কমিশনের অতিরিক্ত দায়িত্ব ঃ দেশের সরকার পার্লামেন্টে আইন পাশ করে কোন অতিরিক্ত দায়িত্ব কমিশনের ওপর চাপাতে পারে। কমিশন এই দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য থাকে।
সমালোচনা ঃ ভারতের কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের কয়েকটি সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করা হল -
(i) যেহেতু কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন একটি পরামর্শদাতা সংস্থা সেহেতু সরকার কমিশনের পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য নয় এবং এব্যাপারে আদালতে কোনরূপ মামলা করা যায়না। দেশের সরকার যদি কমিশনের পরামর্শ না মানে তাহলে পার্লামেন্টে সরকারকে এই পরামর্শ না মানার কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়। যেহেতু পার্লামেন্টে সরকারি দল সবসময় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে তাই তাদের সিদ্ধান্ত পার্লামেন্টে কখনো পরাজিত হবার আশঙ্কা থাকে না।
(ii) রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের পরামর্শ ছাড়াই অনেক সময় দেখা যায় দেশের সরকার অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ করে এবং এইসব কর্মচারীদের ভবিষ্যতে স্থায়ী হবার সম্ভাবনা থাকে।
.(iii) অনেক সময় কমিশন অনেক দেরিতে তাদের রিপোর্ট জমা করে ফলে এই রিপোর্টের গুরুত্ব বা মূল্য কমে যায়।
উপসংহার ঃ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন অনেক ক্ষমতা এবং মর্যাদার অধিকারী। কমিশন এখনো পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে এবং কমিশনের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত বড়ো কোন অভিযোগ ওঠেনি। দিন দিন কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং বর্তমানে কমিশন তাদের কর্মপ্রার্থীদের সাথে যোগাযোগের জন্য ওয়েবসাইটের ব্যবস্থা করেছে। যাই হোক আশা করা যায় ভবিষ্যতে কমিশন যোগ্য সরকারি কর্মচারী নিয়োগে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।