কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র কৃত্যক এর নিয়োগ পদ্ধতি
কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যকদের নিয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তবে বিভিন্ন সময়ে এই পদ্ধতি গুলির কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনকে আমরা মূলত তিনটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি। যথা -
প্রথম পর্যায়, ১৯৭৯ সালের আগে।
দ্বিতীয় পর্যায়, ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত।
তৃতীয় পর্যায়, ১৯৯৩ সালের পর থেকে।
প্রথম পর্যায় ঃ
সমস্ত পদপ্রার্থীদেরকে তিনি আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়, যার মান ৪৫০। এই তিনটি বিষয় হল - (i) ইংরেজি, ১৫০ নম্বর, (ii) রচনা, ১৫০ নম্বর এবং (iii) সাধারণ জ্ঞান, ১৫০ নম্বর। মোট - ৩ × ১৫০ = ৪৫০
পদপ্রার্থীদের ৪৫ টি ঐচ্ছিক বিষয়ের মধ্যে যেকোন তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হত। মোট নম্বর ৩ × ২০০ = ৬০০
যারা IAS এবং IFS পদপ্রার্থী তাদের অতিরিক্ত দুটি পরীক্ষা দিতে হত। সেখানে মোট নম্বর ২ × ২০০ = ৪০০
সেসব প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় পাশ করত তাদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হত। মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে IFS -দের জন্য ৪০০ নম্বর, IAS -দের জন্য ৩০০ নম্বর এবং অন্যদের জন্য ছিল ২০০ নম্বর। পরীক্ষার বয়সসীমা ছিল ২১-২৬ বছর। তবে ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রছাত্রীরা এই পরীক্ষায় বসতে পারত না।
দ্বিতীয় পর্যায় ঃ
১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে কোঠারি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সর্বভারতীয় কৃত্যক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমবার বড়সড় পরিবর্তন আসে। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি পরীক্ষার পরিবর্তে দুটি পরীক্ষা নেওয়ার নিয়ম চালু হয়। প্রথমটি প্রারম্ভিক পরীক্ষা (Preliminary Examination) এবং দ্বিতীয়টি মূল পরীক্ষা (Main Examination)।
প্রারম্ভিক পরীক্ষা (Preliminary Examination) ঃ এই পর্বে পরীক্ষার্থীদের দুটি বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথমটি ১৫০ নম্বরের সাধারণ জ্ঞান এবং অপরটি ৩০০ নম্বরের ঐচ্ছিক বিষয়। মোট (১৫০ + ৩০০ = ৪৫০)। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পরীক্ষার্থী মূল পরীক্ষা বা Main Examination -এ বসতে পারে।
মূল পরীক্ষা (Main Examination) ঃ Preliminary Examination -এ উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরাই কেবল মূল পরীক্ষা দিতে পারবে। এখানে তাদের আটটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলি হল -
প্রথম পত্র - ভারতের অষ্টম তপশীলে উল্লিখিত যেকোন একটি ভাষা নম্বর, মান ৩০০।
দ্বিতীয় পত্র - ৩০০ নম্বরের ইংরেজি।
তৃতীয় ও চতুর্থ পত্র - ৩০০ নম্বরের সাধারণ জ্ঞান।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ পত্র - ৬০০ নম্বরের প্রথম ঐচ্ছিক বিষয়।
সপ্তম ও অষ্টম পত্র - ৬০০ নম্বরের দ্বিতীয় ঐচ্ছিক বিষয়।
লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে পরীক্ষার্থীরা মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পায়। কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে মৌখিক পরীক্ষা ৩০০ নম্বরের পরিবর্তে ২৫০ নম্বরের করা হয়। সাধারণ প্রার্থীরা ৩ বার এই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পায় এবং এই সময় থেকেই ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়াররাও পরীক্ষায় বসার সুযোগ পায়।
তৃতীয় পর্যায় ঃ প্রায় দশ-বারো বছর কোঠারি কমিশনের সুপারিশে চলার পর ১৯৯৩ সালে সতীশচন্দ্র কমিটির সুপারিশে সর্বভারতীয় কৃত্যকের পরীক্ষা ব্যবস্থায় আবার পরিবর্তন আসে। এই কমিটির সুপারিশে পরীক্ষা পদ্ধতি হল -
প্রারম্ভিক পরীক্ষা ঃ এই পর্বে পরীক্ষার্থীদের দুটি লিখিত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হত। সাধারণ বিষয়ে ১৫০ নম্বর এবং ৩০০ নম্বরের ঐচ্ছিক বিষয়।
মূল পরীক্ষা ঃ প্রারম্ভিক পরীক্ষায় পাশ করা প্রার্থীরাই মূল পরীক্ষার জন্য বসতে পারে। মূল পরীক্ষায় থাকে নয়টি বিষয়।
প্রথম পত্র - অষ্টম তপশীলে উল্লিখিত যেকোন একটি ভাষা নম্বর, মান ৩০০।
দ্বিতীয় পত্র - ৩০০ নম্বরের ইংরেজি।
তৃতীয় পত্র - রচনা, ২০০ নম্বর।
চতুর্থ ও পঞ্চম পত্র - ৬০০ নম্বরের সাধারণ জ্ঞান।
ষষ্ঠ ও সপ্তম পত্র - ৬০০ নম্বরের প্রথম ঐচ্ছিক বিষয়।
অষ্টম ও নবম পত্র - ৬০০ নম্বরের দ্বিতীয় ঐচ্ছিক বিষয়।
লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলে পরীক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পড়ে। এই কমিটি মৌখিক পরীক্ষা ৩০০ নম্বরের হওয়ার সুপারিশ করে। এই কমিটি নতুন বিষয় হিসাবে প্রবন্ধকে যুক্ত করে এবং ৪৭ টি ঐচ্ছিক বিষয়ের জায়গায় ৪১ টি করা হয়।
মূল্যায়ন ঃ কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের পরীক্ষা এবং নিয়োগ পদ্ধতি বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। বলা হয় সাক্ষাৎকারমূলক পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বে পরীক্ষার্থীদের নানাভাবে ঘাবড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর ফলে পরীক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য সঠিক ভাবে বলতে পারে না। একজনের চাকরি নির্ভর করে কোন পরীক্ষকের পছন্দ-অপছন্দের ওপর। তাই এই পরীক্ষা পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে।