প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করব "মিউনিখ চুক্তি কি" -এই প্রশ্নটি। এখানে আমরা হিটলারের কূটনৈতিক লক্ষ্য, মিউনিখ চুক্তির শর্ত ইত্যাদি দেখব।
মিউনিখ চুক্তি -
হিটলারের কূটনীতির লক্ষ্য ঃ জার্মানির চ্যান্সেলর পদে আসীন হওয়ার পর হিটলারের লক্ষ্য ছিল ব্রিটেন এবং ইতালির সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে ইউরোপে জার্মানির স্থান সুনিশ্চিত করা এবং তিনি নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দেখিয়ে নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন বা লীগ অব নেশনস থেকে জার্মানিকে সরিয়ে রাখেন। এই কূটনীতি গ্রহণ করে হিটলার ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মার্চ অস্ট্রিয়া দখল করেন এবং অস্ট্রিয়া দখল করার পরেই তিনি চেকোস্লোভাকিয়া দখল করতে উদ্যত হয়।
চেকোস্লোভাকিয়া দখলের চেষ্টা ঃ রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটিকে দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের প্রবেশদ্বার বলা হয়। চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চলটি ছিল জার্মানির সীমানাসংলগ্ন। হিটলার সুদেতান অঞ্চলটি দখল করতে উদ্যত হলে ফ্রান্স এবং রাশিয়ার সাথে জার্মানির যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা যায়। সুদেতান অঞ্চলের নাৎসি নেতা হেনলিয়েন দাবী করেন যে সুদেতান অঞ্চলটি জার্মান অধ্যুষিত, তাই এটি জার্মানিকে দিতে হবে। চেক সরকার সুদেতান অঞ্চলটিকে জার্মানির হস্তে অর্পণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু হিটলার এটুকুতে খুশি হতে পারেননি।
মিউনিখ চুক্তি ঃ ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলিন সুদেতান অঞ্চল নিয়ে জার্মানি ও সুদেতান -এর বিরোধের মীমাংসার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মিউনিখ বৈঠকে ইতালির শাসক মুসোলিনির মধ্যস্থতায় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে চেম্বারলিন ও দালাদিয়ের জার্মানির হিটলারের সঙ্গে এক চুক্তি সম্পাদন করেন। এটি ইতিহাসে মিউনিখ চুক্তি নামে খ্যাত। এই চুক্তিতে জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া স্বাক্ষর করেছিল।
চুক্তির শর্ত ঃ মিউনিখ চুক্তির দ্বারা স্থির হয় যে - (i) সুদেতান অঞ্চল জার্মানিকে দিয়ে দেওয়া হবে। (ii) অবশিষ্ট চেকোস্লোভাকিয়ার সার্বভৌমত্ব হিটলার মেনে নেবে।
চুক্তি ভঙ্গ ঃ মিউনিখ চুক্তির দ্বারা চেকোস্লোভাকিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড দখল করেও হিটলার সন্তুষ্ট ছিলেন না। চুক্তির ৬ মাসের মধ্যেই চুক্তি ভঙ্গ করে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ অরাজকতার অজুহাতে সমগ্র চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে নেন।
মূল্যায়ন ঃ মিউনিখ চুক্তি ছিল হিটলারের কূটনৈতিক জয়ের পরিচয়। হিটলার শুধুমাত্র মৌখিক হুমকির দ্বারাই চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চলটি জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হন। অপরদিকে ইঙ্গ-ফরাসি জোটের কাছে এই চুক্তি ছিল 'চরম কূটনৈতিক পরাজয়'।