প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আলেকজান্ডারের আক্রমণ ফলে ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাস বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। এই সময় উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল সে সম্পর্কে জানার জন্য গ্রিক লেখক কার্টিয়াস, প্লুটার্ক, নিয়ারকাস প্রমুখ লেখকের বিবরণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন রাজ্যের অবস্থান ঃ গ্রিক লেখকদের বর্ণনা, তাদের বিবরণ অনুযায়ী তৎকালীন সময়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। গ্রিক লেখকদের বর্ণনায় সেসময়কার ২৭ টি রাজতন্ত্রী এবং প্রজাতন্ত্রী রাজ্যের কথা পাওয়া যায়। এই রাজ্যগুলির মধ্যে কিছু বিশেষ রাজ্যের অবস্থান সম্পর্কে নিন্মে আলোচনা করা হল -
অশ্বক রাজ্য ঃ অশ্বক রাজ্যটি কাবুল নদীর উত্তরে অবস্থিত ছিল। এই রাজ্যটি মূলত পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল। রাজ্যটির দুটি ভাগ ছিল - একটি পূর্ব অশ্বক এবং আরেকটি পশ্চিম অশ্বক।
তক্ষশীলা রাজ্য ঃ প্রাচীন গান্ধার রাজ্যের পূর্বদিকে তক্ষশীলা রাজ্যটির অবস্থান ছিল। আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় রাজা অম্ভি এই রাজ্যে রাজত্ব করছিলেন এবং তিনি আলেকজান্ডারকে ভারত আক্রমণে সহায়তা করেছিলেন।
নিসা রাজ্য ঃ এই সময় নিসা নামের একটি ক্ষুদ্র পার্বত্য রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। কাবুল এবং সিন্ধু নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই রাজ্যটির অবস্থান ছিল। এই রাজ্যটি ছিল প্রজাতান্ত্রিক এবং এরিয়ানের মতে এই রাজ্যের লোকেরা ভারতীয় ছিল না।
অভিসার রাজ্য ঃ কাশ্মীর এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছিল অভিসার রাজ্যটি। এই রাজ্যের রাজাও আলেকজান্ডারকে ভারত আক্রমণে সাহায্য করেছিল।
পুরুর রাজ্য ঃ ঝিলাম এবং চেনাব নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে পুরুর রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। রাজ্যেটির রাজ্য ছিলেন পুরু। ঝিলাম নদীর তীরে হিদাসপিসের যুদ্ধে তিনি আলেকজান্ডারের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। যুদ্ধের হেরে গেলেও পুরুর বিক্রমে মোহিত হয়ে আলেকজান্ডার পুরুকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই রাজ্যের মধ্যে প্রায় তিনশোটি নগর অবস্থিত ছিল।
ছোট পুরুর রাজ্য ঃ রাভি ও চেনাব নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে ছোট পুরুর রাজ্যটি অবস্থিত ছিল।
পুষ্কলাবতী রাজ্য ঃ পুষ্কলাবতী রাজ্যটির অবস্থান ছিল প্রাচীন গান্ধার রাজ্যের পশ্চিম দিকে কাবুল এবং সিন্ধু নদীর মাঝে। রাজ্যটির রাজা ছিলেন অষ্টক যিনি আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হয়েছিল।
উপরি উল্লিখিত রাজ্যগুলি ছাড়াও আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণকালে ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে কিছু রাজতন্ত্রী রাজ্য গড়ে উঠেছিল। যেমন - শিবি রাজ্য, শৌভুতি রাজ্য ইত্যাদি। এগুলির পাশাপাশি কিছু প্রজাতন্ত্রী রাজ্যও ছিল। যেমন - মালব, ক্ষুদ্রক, ক্ষত্রী প্রভৃতি।
রাজ্যগুলির প্রকৃতি ঃ উত্তর-পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যগুলির মধ্যে কোন রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। বৈদেশিক আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা কখনো একজোট হতে পারেননি, কারণ তারা সর্বদা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকত। এর ফলস্বরূপ আলেকজান্ডার খুব সহজেই ভারতে আক্রমণ চালাতে পেরেছিলেন।
আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়কালে উত্তর-পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যগুলির অবস্থান এবং প্রকৃতি দেখে সহজেই বোঝা যায় যে, এই সময় এই অঞ্চলে কোন রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। রাজ্যগুলি ছিল সর্বদা একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। ফলে তারা প্রত্যেকেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলস্বরূপ ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার যখন ভারত আক্রমণ করেছিলেন, তখন তাঁকে বাঁধা দেওয়ার মত শক্তিশালী রাজ্যের অভাব দেখা যায়।