বৌদ্ধ ধর্মমত সম্পর্কে আলোচনা করো

 বৌদ্ধ ধর্মমত -

গৌতম বুদ্ধের হাত ধরে শুরু হয়েছিল বৌদ্ধ ধর্ম। এই ধর্মের মূলনীতি এবং তত্ত্ব জানার জন্য ত্রিপিটক, জাতক, সিংহলী ইতিবৃত্ত প্রভৃতি গ্রন্থের সাহায্য নিতে হয়। যা থেকে আমরা বৌদ্ধ ধর্মমতের মূল বিষয়গুলি উপলব্ধি করতে পারি। নিন্মে বৌদ্ধ ধর্মমত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল -


আর্যসত্য ও মজঝিম পন্থা ঃ বৌদ্ধধর্মের মূল বিষয়টি হল 'সত্য'কে উপলব্ধি করা। গৌতম বুদ্ধের মতে, আসক্তি থেকেই মানুষের জীবনে যাবতীয় দুঃখের উৎপত্তি হয়। আর এই আসক্তি অবসানের জন্য এবং মানুষের দুঃখ সম্পর্কে গৌতম বুদ্ধ তাঁর অনুগামীদের চারটি সত্য উপলব্ধি করার কথা বলেছেন। একে বৌদ্ধধর্মে 'আর্যসত্য' বলা হয়। এগুলি হল - 

          (i) মানুষের জীবন দুঃখময় অর্থাৎ মানুষের জীবনে দুঃখ আছে।
          (ii) দুঃখের কারণ হল কামনা, বাসনা, আসক্তি ইত্যাদি।
          (iii) দুঃখের অবসান ঘটাতে চাইলে কামনা, বাসনার অবসান ঘটাতে হবে এবং
          (iv) সঠিক পথ অনুসরণ করলে দুঃখের অবসান ঘটানো সম্ভব।

গৌতম বুদ্ধ মনে করতেন যে, অতিরিক্ত ভোগবিলাস অথবা কৃচ্ছ্রসাধন - কোনটিই নির্বাণ লাভের সঠিক পথ নয়। সেজন্য নির্বাণ লাভের জন্য তিনি এই দুটির মধ্যবর্তী একটি পন্থার কথা বলেছেন, যার নাম 'মধ্যপন্থা' (মজঝিম পন্থা)। এই পন্থা অবলম্বন করলে নির্বাণ লাভ সম্ভব।


অষ্টাঙ্গিক মার্গ ঃ গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত বৌদ্ধধর্মের অন্যতম একটি বিষয় হল অষ্টাঙ্গিক মার্গ। মানুষের দুঃখ থেকে নিবৃত্তি এবং নির্বাণ লাভের উপায় হিসাবে তিনি আটটি নীতি বা আদর্শের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলি একত্রে 'অষ্টাঙ্গিক মার্গ' নামে পরিচিত। এগুলি হল (i) সৎ বাক্য (ii) সৎ কর্ম (iii) সৎ চেষ্টা (iv) সৎ জীবিকা (v) সৎ সংকল্প (vi) সৎ চিন্তা (vii) সৎ দৃষ্টি এবং (viii) সৎ সমাধি।


     ব্যাখ্যা ঃ 

          (i) সৎ বাক্য, সৎ কর্ম ও সৎ জীবিকার মাধ্যমে মানুষ তার দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে।
          (ii) সৎ চিন্তা, সৎ চেষ্টা ও সৎ সংকল্পের দ্বারা মানুষ তার মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
          (iii) সৎ দৃষ্টি ও সৎ সমাধির মধ্যে দিয়ে মানুষ দিব্যজ্ঞান লাভ করে।

বৌদ্ধধর্মে 'মধ্যপন্থা' বা মঝঝিন অনুশীলনের জন্য এই আটটি পথ বৌদ্ধ ধর্মে 'অষ্টাঙ্গিক মার্গ' নামে পরিচিত।


নির্বাণ ঃ বৌদ্ধধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্যটি হল নির্বাণ লাভ করা। বৌদ্ধধর্মানুযায়ী জন্মান্তরবাদ এবং কর্মফলবাদের এক চূড়ান্ত পরিণতিই হল 'নির্বাণ'। নির্বাণ বলতে বোঝায় পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি লাভ। যে ব্যক্তি নির্বাণ লাভ করেছেন তাঁকে কখনো জরা, ব্যাধি, মৃত্যু স্পর্শ করতে পারে না। নির্বাণ হল পার্থিব জগতের সমস্ত প্রকার বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ। গৌতম বুদ্ধের মতে, সমুদ্রের যেমন একটিই মাত্র স্বাদ, সেটি হল লবণের। তেমনই বৌদ্ধ ধর্মমতেরও একটি মাত্র স্বাদ বা লক্ষ্য হল দুঃখের হাত থেকে মুক্তি লাভ। বৌদ্ধ ধর্মমত অনুসারে কোন মানুষ জীবনযাপন এবং নির্ভুল চিন্তা করলে সে দুঃখকে এড়াতে পারবে।


পঞ্চশীল ঃ 'অষ্টাঙ্গিক মার্গ' পালন করা ছাড়াও বৌদ্ধধর্মে আরও পাঁচটি নীতি পালনের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এগুলি হল - 

     (i) ব্যভিচারী না হওয়া।
     (ii) সুরাপান না করা।
     (iii) মিথ্যা কথা না বলা।
     (iv) পরদ্রব্যে অর্থাৎ অন্যের জিনিসে লোভ না করা।
     (v) হিংসা না করা।

গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত বৌদ্ধধর্মের এই পাঁচটি নীতিতে একত্রে 'পঞ্চশীল' নীতি বলা হয়।


আরও পড়ুন ঃ 

Post a Comment

Previous Post Next Post