চিপকো আন্দোলন কি

চিপকো আন্দোলন (Chipko movement) ঃ

ভারতবর্ষে বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। এই সব আন্দোলনগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্দোলন সফলও হয়েছে। যার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য একটি আন্দোলন হল 'চিপকো আন্দোলন'।

     চিপকো একটি 'গাড়োয়ালি' শব্দ। 'চিপকো' কথাটির আক্ষরিক অর্থ জড়িয়ে ধরা বা চেপে ধরা।১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বর্তমান উত্তরপ্রদেশের রাজ্য সরকারের নির্দেশে গাড়োয়াল জেলার মণ্ডল গ্রামের বৃহৎ বৃক্ষগুলি কেটে নেওয়ার জন্য একটি ক্রীড়াসামগ্রী উৎপাদনকারী সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়। এর ফলে সেখানকার গ্রামবাসীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং এর প্রতিরোধের জন্য গ্রামবাসীরা স্বতঃস্ফূর্ত ও অহিংস আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে।

     এই আন্দোলনের মূল বিষয় হল, ঠিকাদাররা গাছ কাটতে এলে গ্রামের মহিলারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গাছগুলিকে জড়িয়ে ধরত। ফলে ঠিকাদাররা আর গাছ কাটতে না পেরে ফিরে যেত। ১৯৭৩ সালে গাছ কাটার বিরুদ্ধে এই স্বতঃস্ফূর্ত এবং অহিংস আন্দোলন "চিপকো আন্দোলন" নামে পরিচিত।

নেতা ঃ

     চিপকো আন্দোলনের নেতা ছিলেন অন্যতম গান্ধীবাদী নেতা শ্রী সুন্দরলাল বহুগুণা। এছাড়াও গৌরী দেবী, বাচনী দেবী, চণ্ডীপ্রসাদ ভাট, গোবিন্দ সিং রাওয়াত, ধুম সিং নেগী, মিরা বেন প্রমূখ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেছিলেন।

স্লোগান ঃ

     চিপকো আন্দোলনের স্লোগান ছিল "What do the forest bear ? Soil, water and pure air."

গতি-প্রকৃতি ঃ

     গাড়োয়াল জেলায় শুরু হওয়া এই আন্দোলন ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। সুন্দরলাল বহুগুণা, মীরা বেন প্রমুখের সরাসরি নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি বহু কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এই আন্দোলনের সমর্থন করেছিলেন। আন্দোলনকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঠিকাদাররা পুলিশের সাহায্য প্রার্থনা করে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলেও আন্দোলন থামেনি। এরপর পুলিশ বাহিনী পরাস্ত হয় এবং আন্দোলনে নেতৃত্বদানের জন্য ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরলাল বহুগুণা-কে ভারত সরকার পদ্মবিভূষণ পদকে ভূষিত করে।


আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ঃ

     চিপকো আন্দোলনকারীদের মূল বক্তব্য ছিল -

          (i) গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।

          (ii) গাছ কাটলে গ্রামবাসীরা গাছের ফল, ফুল, ছায়া এবং রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ ইত্যাদি আর পাবে না। 

          (iii) গাছ কাটার ফলে সেখানে অনাবৃষ্টি সৃষ্টি হলে খরা দেখা দেবে। ফলে তাদের জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটবে। 

সুতরাং বলা যায়, চিপকো আন্দোলনকারীদের মূল বক্তব্য পাঁচটি "F". (i) Food - খাদ্য (ii) Fodder - পশুখাদ্য (iii) Fuel - জ্বালানি (iv) Fibre - তন্তু (v) Fertilizer - সার। 


গুরুত্ব ঃ চিপকো আন্দোলনের গুরুত্বগুলি হল -

     (i) আন্দোলনের ফলে ওই অঞ্চলে গাছ কাটা পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে, গাড়োয়াল অঞ্চলে আগামী ১৫ বছর কোন প্রকার গাছ কাটা হবে না।

     (ii) এই আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষ মাটি, জল, গাছ, বিশুদ্ধ বাতাস অর্থাৎ বলা যায় প্রকৃতি সম্পর্কে বেশি করে সচেতন হয়েছে। মানুষ তাদের জীবনে প্রকৃতির গুরুত্বকে বুঝতে শিখেছে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post