রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী -
প্রশাসনের সাফল্য ও উৎকর্ষতা নির্ভর করে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের উন্নত গুণগত মান, নৈপুণ্য, দক্ষতা, সততা এবং নিরপেক্ষতার উপর। ভারতের সংবিধান প্রণেতারা একথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এজন্য তারা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য সংবিধানের ৩১৫ (১) নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। তবে দুটি বা তার বেশি রাজ্য ইচ্ছা করলে পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি সংযুক্ত রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন গঠন করতে পারে। আবার কোন রাজ্যের রাজ্যপালের অনুরোধে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগ করতে পারে।
কমিশন গঠন ঃ একজন সভাপতি এবং রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত কিছু সদস্যদের নিয়ে রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্যপদ লাভের জন্য কোন ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় সরকার অথবা কোন রাজ্য সরকারের অধীনে কমপক্ষে দশ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কমিশনের সভাপতি এবং অন্যান্য সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর। তবে কার্যকাল শেষ হওয়ার পূর্বেই যদি কমিশনের সভাপতি বা কোন সদস্যের বয়স ৬২ হয়, তাহলে তাঁকে কাজ থেকে অবসর নিতে হয়।
পদত্যাগ ঃ ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের কোন সদস্য তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে পদত্যাগ করতে চাইলে তিনি উক্ত রাজ্যের রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করতে পারেন।
পদচ্যুতি ঃ পদত্যাগের পাশাপাশি সংবিধানে পদচ্যুতির কথাও বলা আছে। কোন রাজ্যের রাজ্যপাল সেই রাজ্যের রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের সভাপতি এবং সদস্যদের পদচ্যুত করতে পারেন। অসদাচরণের জন্য রাজ্যপাল কোন সদস্যকে পদচ্যুত করতে পারেন। তবে রাজ্যপাল সরাসরি কোন সদস্যকে অপসারণ বা পদচ্যুত করতে পারেন না, এজন্য অপসারণের বিষয়টিকে রাজ্যপাল সুপ্রিমকোর্টে প্রেরণ করেন। সুপ্রিমকোর্ট বিষয়টি বিবেচনার পর নির্দেশ দিলে রাজ্যপাল তখন সেই সদস্যকে অপসারণ করতে পারেন।
কার্যাবলী ঃ রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের কার্যাবলীগুলি নিন্মে আলোচনা করা হল -
(i) রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের প্রধান এবং অন্যতম কাজ হল রাজ্য সরকারের অধীনে চাকরিতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
(ii) কোন বিষয়ে যদি রাজ্যপাল কমিশনের মতামত জানতে চাই তাহলে কমিশন রাজ্যপালকে সাহায্য করে থাকে।
(iii) কমিশন রাজ্যপালের কাছে তার বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করে। তাতে থাকে, কমিশন কি কি কাজ করছে, সরকারের কোন কোন পরামর্শ কমিশন গ্রহণ করছে কিংবা কমিশনের কোন কোন পরামর্শ সরকার গ্রহণ করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কমিশনের এই প্রতিবেদন রাজ্যপাল কর্তৃক রাজ্য আইনসভায় পেশ করা হয়।
সরকারকে পরামর্শ ঃ রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকে। যেমন -
(i) অসামরিক চাকরি এবং পদসমূহের নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতি ও বদলির নীতি নির্ধারণ।
(ii) অসামরিক কর্মচারীদের শৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিষয়।
(iii) কর্মরত অবস্থায় আহত হয়ে অবসর গ্রহণ করার জন্য অসামরিক কর্মচারীদের পেনশনের দাবি।
(iv) কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনীত মামলার ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়।
সমালোচনা ঃ রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের কার্যাবলীর কতকগুলি সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
(i) যেহেতু রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন একটি পরামর্শদাতা সংস্থা হিসাবে কাজ করে, সেহেতু সরকার এই কমিশনের পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য নয়। এই ব্যাপারে আদালতে কোন মামলা করা যায় না। কমিশনের পরামর্শ না মানলে সরকারকে রাজ্য আইনসভায় এই পরামর্শ না মানার কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়। কিন্তু সরকারি দল আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার কারণে সরকারের কোন সিদ্ধান্তই আইনসভায় পরাজিত হয় না।
(ii) রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের পরামর্শ ছাড়াই অনেক সময় সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ করে থাকে। এইসব কর্মচারীদের পরে স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(iii) কমিশন তার বার্ষিক রিপোর্ট অনেক দেরিতে রাজ্য আইনসভায় পেশ করে। ফলে রিপোর্টের গুরুত্ব হ্রাস পায়।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও কমিশন ব্যাপক ক্ষমতা এবং মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে। আজ পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী কমিশন তার কাজ নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনভাবে করে এসেছে। এখনো পর্যন্ত কমিশনের বিরুদ্ধে কোন বড় অভিযোগ ওঠেনি। সুতরাং আশা করা যায় যে, আগামী দিনেও কমিশন যোগ্য সরকারি কর্মচারী নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন ঃ