মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও

মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রা - 

'মধ্যপ্রস্তর যুগ বলতে 'প্রাচীনপ্রস্তর যুগ এবং নব্যপ্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে বোঝানো হয়। নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষদের জীবনযাত্রার পার্থক্য খুব বেশি একটা চোখে পড়ে না। অনেক ঐতিহাসিকের মতে মধ্যপ্রস্তর যুগের শেষ সময় এবং নব্যপ্রস্তর যুগের শুরুর পর্বটা ছিল সমার্থক। আনুমানিক ১৫০০০ খ্রি. পূ. থেকে আনুমানিক ১০০০০ খ্রি. পূ. পর্যন্ত সময়কাল হল মধ্যপ্রস্তর যুগের বিস্তারকাল। এই সময় মানুষের হাতিয়ার তৈরির পদ্ধতিতে বদল ঘটেছিল। বদল ঘটেছিল মানুষের জীবনযাত্রারও। মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় নিন্মে তুলে ধরা হল - 



ভৌগলিক পরিবর্তন ঃ মধ্যপ্রস্তর যুগে পৃথিবীর ভৌগলিক পরিবর্তন ঘটেছিল। যার প্রভাব এই সময়কার মানুষদের মধ্যেও দেখা গিয়েছিল। এই সময় বদলে গিয়েছিল মানুষদের জীবনযাত্রার ধরণ। একদিকে যেমন তুষার যুগের অবসান ঘটেছিল অন্যদিকে তেমনই বৃদ্ধি পেয়েছিল সমুদ্রের জলস্তর। বেড়ে গিয়েছিল বনভূমি এবং বিপরীতে জন্ম নিয়েছিল বড়ো বড়ো মরুভূমি। পৃথিবীর এইরকম ভৌগলিক পরিবর্তনে বিদায় নিয়েছিল বহু জীব এবং উদ্ভিদ প্রজাতি পাশাপাশি পরিবর্তন হয় অন্যান্য জীবের জীবনযাত্রা।


হাতিয়ারের ব্যবহার ঃ মধ্যপ্রস্তর যুগে হাতিয়ারের ক্ষেত্রে একটি বড়ো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এই সময় পাথরের তৈরি হাতিয়ারের আকার পূর্বের তুলনায় আরও ছোট হয়ে গিয়েছিল এবং হাতিয়ার গুলি আগের চেয়ে অনেক ধারালো, সূচালো এবং মসৃণ হয়েছিল। এই যুগে শুধু ক্ষুদ্র আকারের পাথরের হাতিয়ারের পাশাপাশি জীবজন্তুর হাড় থেকে তৈরি হত তির-ধনুক, তুরপুন, বাটালির মত ছোট আকারের হাতিয়ার।


খাদ্যাভ্যাস ঃ মধ্যপ্রস্তর যুগের শুরুর দিকে মানুষের জীবনযাত্রার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। শুরুর দিকে মানুষ তখনও খাদ্যসংগ্রাহক রুপেই জীবনযাপন করছে এবং খাদ্য উৎপাদন করার কৌশল সম্পর্কে তখনও তারা অবগত ছিল না। তারা ফলমূল সংগ্রহ, পশুশিকার ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের দিনযাপন করত। নদী, সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে তারা পেট ভরাত। সময়ের সাথে সাথে তারা গরু, ছাগল, কুকুর, ইত্যাদি পশুকে পোষ মানিয়েছিল। মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ মাটির তৈরি পাত্র তৈরি করতে শিখেছিল এবং এই যুগের শেষেরদিকে মানুষ কৃষিকাজ করার কৌশল জানতে পেরেছিল। 


যাতায়াত ব্যবস্থা ঃ মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ বরফে চলার জন্য স্লেজগাড়ির ব্যবহার সম্পর্কে অবগত ছিল। জলপথে যাতায়াতের জন্য তারা কাঠের গুড়ি দিয়ে নৌকা, ভেলা ইত্যাদি তৈরি করত।

উপসংহার ঃ মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ তাদের জীবনযাত্রার পরিচয় গুহাচিত্রের মাধ্যমে আমাদের কাছে রেখে গেছে। মধ্যপ্রস্তর যুগের নিদর্শন মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকা, গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং পাকিস্তানের কিছু অংশে মিলেছে। মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ শবদেহকে সমাধিস্থ করত। 

Post a Comment

Previous Post Next Post