রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান নয় - পক্ষে যুক্তি দাও

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান নয় - পক্ষে যুক্তি 

সকল রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা 'রাষ্ট্রবিজ্ঞান'-কে বিজ্ঞান বলে মানতে চান না। যারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলে স্বীকার করেননা তাদের মতে -



     (i) জটিলতা ঃ যারা বলেন 'রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান নয়', তাদের মতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু অত্যন্ত জটিল, ব্যাপক এবং অনিশ্চয়তাপূর্ণ। সুতরাং প্রাকৃতিক বিজ্ঞান অর্থাৎ, পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়ন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাদের বিষয়বস্তু যেভাবে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করা যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা সেভাবে করা সম্ভব নয়।

     (ii) পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার অভাব ঃ পদার্থবিদ্যা বা রসায়নশাস্ত্রের যেমন গবেষণা করা সম্ভব হয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণায় সেরকম পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ সম্ভব নয়। সেজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণার ফল পদার্থবিদ্যা বা রসায়নশাস্ত্রের মত অভ্রান্ত হতে পারে না। যেহেতু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু স্বাধীন স্বতন্ত্র ইচ্ছাসম্পন্ন মানুষ এবং মানুষ জড় পদার্থ নয়, তার স্বতন্ত্র ইচ্ছা আছে এবং সেই ইচ্ছার পরিবর্তন হতে পারে সেহেতু মানুষের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজ এবং রাজনৈতিক সম্পর্কেরও পরিবর্তন হয়।


     (iii) অস্পষ্টতা ঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল সূত্রগুলি অস্পষ্ট এবং তা সুনির্দিষ্ট নয়। সেজন্য সর্বজন স্বীকৃত কোন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতি এক্ষেত্রে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নশাস্ত্রের সূত্রগুলি সর্বজনগ্রাহ্য এবং এর সত্যতা সম্পর্কে কোন সংশয় নেই কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এমন সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের সমর্থকগণের সংখ্যা যেমন অনেক আছে তেমনই এর বিরোধীগণের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নীতি ও তত্ত্বের মধ্যে কোনটি গ্রহণযোগ্য বা কোনটি কাম্য এবং সর্বজন স্বীকৃত হবে সেসম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।


     (iv) মূল্য নিরপেক্ষতার অভাব ঃ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের আলোচনা মূল্য-নিরপেক্ষ হতে পারে। কারণ পরীক্ষাগারে বিজ্ঞানী তাঁর পরীক্ষালব্ধ ফলটিকেই প্রকাশ করে, সেখানে বিজ্ঞানীর কোন ব্যক্তিগত মতামত থাকে না। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যক্তির ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, তার বিশ্বাস, তার ইচ্ছা এগুলি সবই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণায় প্রভাব বিস্তার করে।

Post a Comment

Previous Post Next Post