মন্ত্রীমিশন বা ক্যাবিনেট মিশনের সুপারিশ -
নৌ-বিদ্রোহ চলাকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলী ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি ক্যাবিনেট মিশন ভারতে পাঠানো হবে। এরপর সেই ঘোষণা অনুসারে পেথিক লরেন্স, স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস এবং এ.ভি.আলেকজান্ডার -- এই তিন জন ভারতে আসেন। কিন্তু বহু আলাপ-আলোচনার পরেও ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রীমিশন কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছতে পারেনি। কারণ মহম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর পূর্ববর্তী ভারত বিভাগের দাবিতে অনড় থাকেন কিন্তু অপরদিকে জাতীয় কংগ্রেস দেশ বিভাগের প্রস্তাব তীব্র বিরোধিতা করে। অবশেষে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মে ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রীমিশন নিজেদের সুপারিশগুলি একতরফাভাবে প্রকাশ করেন। নিন্মে ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রীমিশনের সুপারিশ গুলি তুলে ধরা হল -
১. ভারত হবে একটি যুক্তরাষ্ট্র অর্থাৎ Federal union.
২. ভারতের প্রদেশগুলি হবে (i) হিন্দু প্রধান, (ii) মুসলিম প্রধান (iii) বাংলা ও আসাম - এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত।
৩. ভারতের গণপরিষদ এবং আইনসভার নির্বাচন সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে।
৪. নির্বাচনের পর কোন প্রদেশ তার ইচ্ছামত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র পরিত্যাগ করতে পারবে।
৫. ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিজেদের যুক্ত করতে পারবে।
৬. যতদিন না ভারতের নতুন সংবিধান রচিত হবে, ততদিন ভারতে একটি 'অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকার' শাসন পরিচালনা করবে।
ক্যাবিনেট মিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত এই সুপারিশগুলি জাতীয় কংগ্রেসকে সন্তুষ্টি প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। কংগ্রেস সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে নির্বাচনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে। তবে সংবিধান থাকার জন্য মুসলিম লীগ আনন্দিত হয় এবং অতিদ্রুত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু এতে কংগ্রেস অসম্মতি জানায়। ফলে লর্ড ওয়াভেল অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দ্বিধা করেন এবং মুসলিম লীগ ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনা বর্জন করেন।