সিন্ধু সভ্যতার আর্থসামাজিক জীবন -
১৯২১ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ দয়ারাম সাহানি এবং রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়-এর হাত ধরে সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার ঘটে। এখানকার প্রত্নতাত্তিক খননকার্যের মাধ্যমে যেসব উপাদান পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে সিন্ধু সভ্যতার আর্থ সামাজিক জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা যায়। নিন্মে সিন্ধু সভ্যতার আর্থসামাজিক জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
অর্থনৈতিক জীবন ঃ সিন্ধু সভ্যতা ছিল নদীমাতৃক সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার নগরের চারপাশে ছিল গ্রাম এবং শস্যক্ষেত্র। সিন্ধুর অধিবাসীদের মূল জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। তবে অনেকেই শিল্প এবং বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করতেন। সেঁচের ব্যবস্থার জন্য নদীরবাঁধকে কাজে লাগানো হত।
দৈনন্দিন জীবন ঃ সিন্ধু সভ্যতার মানুষ গম, যব, খেজুর, বাদাম প্রভৃতি খাবার হিসাবে গ্রহণ করত। তাছাড়া ভেড়া, শুকর এবং বিভিন্ন পাখির মাংস তারা ভক্ষণ করত। সোনা ও রুপার অলংকার তারা ব্যবহার করতেন। সিন্ধু উপত্যকার শহরগুলি ছিল সুতিবস্ত্র উৎপাদনের কেন্দ্র।
ব্যবসাবাণিজ্য ঃ সিন্ধুবাসীর আর্থিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বাণিজ্য। প্রতিবেশী অঞ্চল ছাড়াও মধ্য এশিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সিন্ধুর বাণিজ্য চলত। বিলাস দ্রব্য, হাতির দাঁত, সুতিবস্ত্র প্রভৃতি রপ্তানি হত। আর রুপা, মণিমুক্ত প্রভৃতি আমদানি করা হত। ব্যবসাবাণিজ্যের কারণে বহু বিদেশি বণিক সিন্ধু অঞ্চলে বসবাস করত।
সামাজিক জীবন ঃ সিন্ধু সভ্যতার সমাজে শ্রেণি বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। বড়ো প্রাসাদ এবং ছোট ছোট ঘর থেকে ধনী-দরিদ্রের শ্রেণি বৈষম্য বোঝা যায়। সিন্ধু অঞ্চলে বহু গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করত। সিন্ধু অঞ্চলের মানুষেরা মাতৃদেবতা ও প্রকৃতির পূজা করত। সিন্ধু সমাজে শিব পুজার প্রচলন ছিল। মৃত মানুষকে সমাধিস্থ করা হত। সামজের সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন শাসক এবং সবার নীচে ছিল সাধারণ কৃষক এবং শ্রমিক শ্রেণির মানুষ।