ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তির বৈশিষ্ট্য -
(i) এই চুক্তির ফলে আধুনিক সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। এর ফলে পোপের কর্তৃত্ব ও রোমান সম্রাটদের রাজনৈতিক অধিকার সীমিত হয়ে পড়েছিল এবং চরম কর্তৃত্বসম্পন্ন রাষ্ট্রব্যবস্থার উত্থানের পথ সুগম হয়েছিল।
(ii) ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল এতে সার্বভৌমত্বের নীতি স্বীকৃত হয়েছিল। এর অর্থ প্রতিটি রাষ্ট্র প্রত্যেকের এলাকাভিত্তিক অধিকারগুলিকে সম্মান করবে এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। এইভাবে ইউরোপের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্ম হয় এবং ইউরোপ একটি সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্রের একক মহাদেশ হিসাবে সমগ্র বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে।
(iii) ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তিটি সেই সময় বিশ্বজুড়ে সহনশীলতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিকাশের মূল পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল। এই চুক্তির ফলে ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্টদের ধর্মযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল।
(iv) এই চুক্তির আগে পর্যন্ত ইউরোপীয় রাজনীতির ভরকেন্দ্র ছিল জার্মানি। কিন্তু এই চুক্তির ফলে ইউরোপীয় রাজনীতির ভরকেন্দ্র জার্মানি থেকে সরে ফ্রান্সের ওপর আসে এবং ফ্রান্সের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
(v) ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির ফলেই ইউরোপে শক্তিসাম্যের ধারণা গড়ে উঠেছিল। এর মাধ্যমে কয়েকটি জাতিরাষ্ট্রের আগ্রাসন নীতিকে সংকোচিত করা হয়েছিল।
(vi) আধুনিক রাষ্ট্রে দূতাবাস এবং দেশে দেশে কূটনৈতিক আইন তৈরিতে এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর মাধ্যমেই প্রতিটি রাষ্ট্র নিজের ভৌগলিক অখণ্ডতাকে রক্ষা করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের স্থায়িত্বের মর্যাদা পায়। প্রতিটি দেশ একে অপরের সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারল।
(vii) ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির মাধ্যমেই আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যার ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রথম সূচনা হয়। এজন্য এই চুক্তির সময়কালকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রাথমিক পর্ব বা আদিকাল বলা হয়।
(viii) এই চুক্তির ফলে আন্তর্জাতিক আইনের জন্ম হয়। আন্তর্জাতিক আইনকে বিভিন্ন জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যেকার বিরোধ নিষ্পত্তির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এপ্রসঙ্গে হুগো গ্রটিয়াস-এর রচিত যুদ্ধ ও সন্ধি বিষয়ক গ্রন্থ "de jure belli ac pacis" -এর কথা বলতে হয়, যেটি ইউরোপীয় রাজনীতিতে একটি নবযুগের সূচনা করেছিল।
সবশেষে বলা যায় যে, দীর্ঘকালীন যাবৎ চলে আসা ইউরোপের ধর্মযুদ্ধ ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির মাধ্যমেই শেষ হয়েছিল। এই চুক্তির ফলেই ইউরোপের রাজনীতিতে স্থায়ী কূটনৈতিক ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে। তবে এই চুক্তির ফলে অস্ট্রিয়া-রাশিয়া সংঘাতের মতে কিছু আন্তর্জাতিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল।