হুন আক্রমণ প্রতিরোধে স্কন্দগুপ্তের ভূমিকা লেখ

হুন আক্রমণ প্রতিরোধে স্কন্দগুপ্তের ভূমিকা -

শ্রীগুপ্তের হাত ধরে শুরু হয়েছিল গুপ্ত বংশ। এই বংশের শেষ শক্তিশালী সম্রাট ছিলেন প্রথম কুমারগুপ্তের পুত্র স্কন্দগুপ্ত। পিতার মৃত্যুর পর স্কন্দগুপ্ত নিজ ক্ষমতা ও বাহুবলে গুপ্ত রাজবংশের সিংহাসনে বসেন। জুনাগড় শিলালিপি ও ভিতারি স্তম্ভলিপি থেকে আমরা স্কন্দগুপ্তের হুন আক্রমণ প্রতিরোধ, পুষ্যমিত্রের আক্রমণ প্রতিরোধ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারি। নিন্মে হুন আক্রমণ প্রতিরোধে স্কন্দগুপ্তের ভূমিকা আলোচনা করা হল -

পুষ্যমিত্রের আক্রমণ প্রতিরোধ ঃ স্কন্দগুপ্তের পিতা প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকালের শেষভাগে পুষ্যমিত্র ও বাকাটক রাজ্যের মিলিত আক্রমণে গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভীত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। স্কন্দগুপ্ত এই আক্রমণ প্রতিহত করে গুপ্ত সাম্রাজ্যকে রক্ষা করেন এবং ৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি গুপ্তবংশের সিংহাসনে বসেন। সিংহাসন আহরণের পর হুন আক্রমণ প্রতিরোধ ছিল তাঁর অন্যতম কীর্তি, যা তাকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে।

হুন আক্রমণ প্রতিরোধ ঃ ভিতারি স্তম্ভলিপি থেকে জানা যায়, হুনদের 'শ্বেতহুন শাখা' গুপ্ত সাম্রাজ্যের ওপর আঘাত হেনেছিল। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে হূনরা ভারতে প্রবেশ করেছিল। কারণ গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম দিক সুরক্ষিত করার জন্য গুপ্তরাজারা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। হুন আক্রমণের সময় স্কন্দগুপ্ত হুনদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। হুন আক্রমণ প্রতিরোধ করে তাদের পরাজিত করার পর স্কন্দগুপ্ত ‘বিক্রমাদিত্য’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। হুন আক্রমণ প্রতিরোধ করে ভারতকে রক্ষা করার জন্য ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার স্কন্দগুপ্তকে ‘ভারতের রক্ষাকারী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

স্কন্দগুপ্তের অন্যান্য কার্যাবলী ঃ সেনাপতির পাশাপাশি স্কন্দগুপ্ত শাসক হিসাবেও উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি কৃষির উন্নতিতে জলসেচের ব্যবস্থা করেন, শিক্ষার উন্নতিতে নালন্দায় একটি বিহার স্থাপন করেন। প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকাল থকেই ক্রমাগত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গুপ্ত সাম্রাজ্য অগ্রসর হতে থাকে। ফলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের শক্তি কমতে শুরু করে। এই পরিস্থিতির সুযোগে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তিগুলি স্বাধীন হয়ে যায়।

মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, স্কন্দগুপ্ত যদি হূনদের কাছ থেকে ভারতকে রক্ষা না করত তাহলে হয়ত ভারতের ইতিহাস অন্যরূপ লাভ করত। সুতরাং, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বর্তমান ভারতের ইতিহাসের এক অন্যতম রুপকার হলেন গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্ত।


আরও পড়ুন ঃ

১. প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকালের গুরুত্ব লেখ - Click here

Post a Comment

Previous Post Next Post