স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধ বলতে কি বোঝ

স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধ বা স্টালিনগ্রাডের লড়াই -

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার লালফৌজের গেরিলা আক্রমণে জার্মান নাৎসি বাহিনী লেনিনগ্রাদ ছেড়ে স্টালিনগ্রাড বা স্টালিনগ্রাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরপর রাশিয়ার স্টালিনগ্রাদ শহরের দখল নিয়ে জার্মান নেতৃত্বাধীন নাৎসি জোট ও রাশিয়ার মধ্যে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই থেকে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তাকে স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধ বলা হয়। স্টালিনগ্রাদ অঞ্চলে রুশ ও জার্মান বাহিনীর মধ্যে এই যুদ্ধ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল। নিন্মে স্টালিনগ্রাদ বা স্টালিনগ্রাডের যুদ্ধে সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা হল -


জার্মানির আক্রমণ ঃ প্রবল বোমাবর্ষণের মধ্যে দিয়ে জার্মান নাৎসি বাহিনী ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই স্টালিনগ্রাদ আক্রমণ করে। ধীরে ধীরে জার্মান বাহিনী স্টালিনগ্রাদ শহরের ভিতরে ঢুকে রেলস্টেশন, বিমানবন্দর সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি দখল করে নেয়। 

রাশিয়ার প্রতিরোধ ঃ জার্মান বাহিনী অনবরত বোমাবর্ষণে স্টালিনগ্রাদের সমস্ত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসপ্রাপ্ত এই সব দালান কোঠায় আশ্রয় নিয়েই রুশ বাহিনী ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত জার্মানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালায়।

জার্মানির লোকক্ষয় ঃ স্টালিনগ্রাদ বা স্টালিনগ্রাড যুদ্ধে জার্মানির ২ লক্ষ ৫৮ হাজার সেনার মৃত্যু হয়, ৮০ হাজার সেনা ও ১৬ জন সেনাপতি রাশিয়ার হাতে বন্দি হয়।

জার্মানির পরাজয় ঃ দীর্ঘ ৭ মাস যুদ্ধ চলার পর অবশেষে জার্মান বাহিনী পরাজিত হয়। রুশ সেনাপতি চুইকভের নেতৃত্বে জার্মান সেনাপতি ভন পাউলাস ও জার্মান বাহিনী ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। 

গুরুত্ব ঃ স্টালিনগ্রাদ বা স্টালিনগ্রাড যুদ্ধের গুরুত্বগুলি হল -

     (i) স্টালিনগ্রাদ যুদ্ধে জার্মানি ও রাশিয়ার প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং এটি ছিল মানব সভ্যতার সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।

     (ii) স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতি পাল্টে গিয়েছিল। এই যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী হয়েছিল এবং জার্মানির ষষ্ঠ বাহিনী ধ্বংস হয়েছিল।

মূল্যায়ন ঃ এককথায় বলতে গেলে স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধ ছিল হিটলারের আত্মমর্যাদার লড়াই। সেজন্য জার্মানি তার সর্ব শক্তি দিয়ে এই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত স্টালিনগ্রাদে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর পতন হয়। ফলে হিটলারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। জার্মানির বিরুদ্ধে রুশ বাহিনী যে স্থান থেকে প্রতিরোধ শুরু করেছিল সেই স্থানে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ৮৫ মিটার উচু একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। যার নাম 'মাতৃভূমি ডাকছে'।

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post