ট্রাফালগারের যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করো

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করব "ট্রাফালগারের যুদ্ধ" / "ট্রাফালগারের যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করো" / "ট্রাফালগারের যুদ্ধের কারণ কি" / "ট্রাফালগারের যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়" / "ট্রাফালগারের যুদ্ধ টীকা" / "ট্রাফালগারের যুদ্ধে কোন দেশ পরাজিত হয়" / "ট্রাফালগারের যুদ্ধ কত সালে হয়" / "ট্রাফালগারের নৌ যুদ্ধ" -এই বিষয়টি। 


ট্রাফালগারের যুদ্ধের কারণ -

১৮০২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে অ্যামিয়েন্সের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই সন্ধির ফলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং ফলস্বরূপ ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে এই দুই দেশের মধ্যে "ট্রাফালগারের যুদ্ধ" সংঘটিত হয়। নিন্মে এই যুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করা হল -

অ্যামিয়েন্সের সন্ধি ঃ ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত অ্যামিয়েন্সের সন্ধি অনুসারে ইংল্যান্ডের মাল্টা দ্বীপ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু সন্ধি স্বাক্ষরিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ড মাল্টা দ্বীপ ছাড়তে অস্বীকার করে। 

নজরদারি ঃ অ্যামিয়েন্সের সন্ধি ভঙ্গ করে ইংল্যান্ড মাল্টা দ্বীপ না ছাড়লে নেপোলিয়নও জার্মানিতে থাকা ব্রিটিশ সম্পত্তির ওপর সেনার নজরদারি শুরু করে। 

ফরাসি জাহাজ আক্রমণ ঃ এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের নৌবাহিনী বারংবার ফ্রান্সের বাণিজ্য জাহাজগুলিকে আক্রমণ করতে থাকে। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে থাকা প্রায় ১০০০ ইংরেজকে বন্দি করে রাখে।

অপপ্রচার ঃ নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে অনবরত ইংল্যান্ডের সংবাদপত্রগুলিতে অপপ্রচার চালানো হলে নেপোলিয়ন ক্ষুব্ধ হয়। এর ফলে উভয় শক্তির মধ্যে যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

ফ্রান্সের নৌশক্তি বৃদ্ধি ঃ ইংল্যান্ড ছিল শক্তিশালী নৌবহরের অধিকারী। সামুদ্রিক বাণিজ্যে ইংল্যান্ডকে টেক্কা দিতে ও নৌযুদ্ধে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ফ্রান্সও তার নৌশক্তি বৃদ্ধিতে তৎপর হয়ে ওঠে। ফলে ইংল্যান্ড আতঙ্কিত হয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।


ট্রাফালগারের যুদ্ধের বিবরণ -

নেপোলিয়নের যুদ্ধ প্রস্তুতি ঃ ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে সংঘটিত অ্যামিয়েন্সের সন্ধি ভেঙে যাওয়ার পর বিভিন্ন ঘটনায় নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ইংল্যান্ড আক্রমণের লক্ষ্যে নেপোলিয়ন ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে ইংলিশ চ্যানেল এবং উত্তর সাগরের তীরে প্রায় ২ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করেন।

তৃতীয় শক্তিজোট ঃ এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও সুইডেনকে নিয়ে গড়ে ওঠে তৃতীয় শক্তিজোট। ফ্রান্স বিরোধী এই তৃতীয় শক্তিজোটকে ভাঙার জন্য নেপোলিয়ন ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া আক্রমণ করে উলমের যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত পরাজিত করে।

ট্রাফালগারের নৌযুদ্ধ ঃ অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে নেপোলিয়ন ইংল্যান্ড আক্রমণ করার আগেই ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর ইংল্যান্ডের নৌ-সেনাপতি নেলসন ফরাসি নৌ-সেনাপতি ভিলনেউড-কে ট্রাফালগারের নৌযুদ্ধে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধের ফলে ফরাসি নৌবহর সম্পূর্ণ রুপে ধ্বংস হয়ে যায়।

মূল্যায়ন ঃ ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের অ্যামিয়েন্সের সন্ধি ভঙ্গের ফলে সৃষ্টি হওয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি দুই দেশই এড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু নেপোলিয়নের প্রতিশোধের ইচ্ছার কারণে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এই যুদ্ধে ফ্রান্সের সাথে সাথে স্পেনের নৌবহরও ইংল্যান্ডের ওপর আক্রমণ করেছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের আক্রমণে উভয় দেশের নৌবহরই ধ্বংস হয়। এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে ইংল্যান্ড আক্রমণের স্বপ্ন নেপোলিয়নের চিরকালের জন্য বিলীন হয়ে যায়। বলাবাহুল্য, এই ট্রাফালগারের নৌ যুদ্ধে পরাজয় ছিল নেপোলিয়নের পতনের প্রথম ধাপ।

আরও পড়ুন ঃ


Post a Comment

Previous Post Next Post