বুর্জোয়া বিপ্লব -
অভিজাত বিদ্রোহের চাপে ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই বাধ্য হয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে স্টেটস জেনারেল বা জাতীয় সভার অধিবেশন ডাকেন। জাতীয় সভার এই অধিবেশনে বুর্জোয়ারা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। যা "বুর্জোয়া বিপ্লব" নামে পরিচিত।
বুর্জোয়া প্রতিনিধি ঃ ১২১৪ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সভা গঠিত ছিল। প্রতিনিধিদের মধ্যে যাজকদের ৩০৮ জন, অভিজাতদের ২৮৫ জন এবং তৃতীয় সম্প্রদায়ের ৬২১ জন সদস্য ছিল। ইতিপূর্বে জাতীয় সভার প্রতিনিধিরা সম্প্রদায় অনুসারে তিনটি আলাদা আলাদা কক্ষে অবস্থান করত।
ভোটদান পদ্ধতি ঃ ফ্রান্সের জাতীয় সভায় সম্প্রদায় পিছু ভোটদানের অধিকার ছিল। মাথাপিছু ভোটদানের অধিকার এই সময় ছিল না। অর্থাৎ যাজক, অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের জন্য তিনটি ভোট ছিল। একটি ভোট মানে একটি সম্প্রদায়কে বোঝায়। যেহেতু যাজক ও অভিজাতদের স্বার্থ একই ধরণের ছিল সেহেতু এই দুই সম্প্রদায় সর্বদা একপক্ষে ভোটদান করত। ফলে এই দুই সম্প্রদায়ের ২ টি ভোট সর্বদা তৃতীয় শ্রেণির ১ মাত্র ভোটকে পরাজিত করে দিত।
বিদ্রোহের সূত্রপাত ঃ জাতীয় সভার অধিবেশনের প্রথম পর্বেই তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা সকল প্রতিনিধিদের একটি কক্ষে বসা এবং সম্প্রদায় পিছু ভোটের পরিবর্তে মাথাপিছু ভোটদানের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। সভায় উপস্থিত যাজক, অভিজাত সম্প্রদায় এবং রাজা এই দাবির বিরোধিতা করে। ফলে অধিবেশনের মধ্যেই বুর্জোয়ারা বিদ্রোহ শুরু করে।
বিদ্রোহের তীব্রতা ঃ লাফায়েৎ, মিরাবো, আবে সিইয়েস প্রমুখ উদারপন্থী অভিজাতরা তৃতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিদ্রোহে যোগদান করে। ফলে বুর্জোয়া বিপ্লব আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। এক সভায় মিলিত হয়ে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা নিজেদের সভাকে 'জাতীয় সভা' বলে ঘোষণা করে। এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক গ্রান্ট ও টেম্পারলি বলেছেন, তৃতীয় শ্রেণির এই কার্যকলাপকে "ফরাসি বিপ্লবের ক্ষুদ্র প্রতীক" বলা যায়।