১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের অর্থনৈতিক মহামন্দা বা বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের কারণ / গ্রেট ডিপ্রেশন -
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ১০ বছরের মধ্যেই ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আমেরিকায় এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়। এই সংকট একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া ইউরোপ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কম বেশি প্রভাব ফেলেছিল। এই ঘটনা বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট বা 'অর্থনৈতিক মহামন্দা' নামে পরিচিত। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মহামন্দা বা বিশ্ব-অর্থনীতির সংকটের কারণগুলি হল -
উৎপাদন বৃদ্ধি ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় শিল্প দ্রব্য উৎপাদনের হার বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। যার পরিমাণ এতই ছিল যে শুধুমাত্র নিজের দেশে বিক্রি করা সম্ভব ছিল না। এরফলে বহু পণ্যসামগ্রী উদ্বৃত্ত থেকে যায়। বাধ্য হয়ে শিল্পপতিরা পণ্যসামগ্রী উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
রপ্তানি হ্রাস ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাদের চাহিদা অনুযায়ী আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে সেই সব দেশে মার্কিন পণ্যের বিক্রির পরিমাণ কমে যায় এবং মার্কিন পণ্যের রপ্তানি কমে গেলে আমেরিকা অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে।
শেয়ার বাজার ধস ঃ সেইসময় আমেরিকার একটি বৃহৎ জনসংখ্যা শেয়ার বাজারে তাদের অর্থ লগ্নি করেছিল। কিন্তু ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর থেকে আমেরিকার শেয়ার বাজার ক্রমশ নীচের দিকে নামতে থাকে, ফলে শেয়ার বাজারে ধস নামে।
কৃষকদের দুর্দশা ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকায় কৃষি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এই অবস্থায় কৃষকরা ঋণ নিয়ে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে কৃষি পণ্যের মূল্য ও চাহিদা উভয়ই কমে যায়। ফলে কৃষকরা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়।
শুল্ক হার ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় বিদেশি পণ্যের ওপর বিপুল পরিমাণ আমদানি শুল্ক চাপানো হয়। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আমেরিকা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর চড়া হারে শুল্ক চাপায়। ফলে উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় আমেরিকার বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
স্বর্ণ-সংকট ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশ নিজ দেশের সোনা আমেরিকায় রপ্তানির বিনিময়ে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমেরিকা থেকে ক্রয় করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে বহু দেশ তাদের নিজেদের সোনা রক্ষার জন্য শুল্ক প্রাচির গড়ে তোলে এবং তারা আমেরিকা থেকে আমদানি বন্ধ করে দেয়।
মূল্যায়ন ঃ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা আমেরিকা সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়। এই সময় বহু আমানতকারী নিঃস হয়ে যায় এবং শিল্প বানিজের প্রভূত ক্ষতি হয়। এই সময় প্রায় অর্ধেক ইউরোপ দেউলিয়া হয়ে যায় এবং বাকি অর্ধেক দেউলিয়া হওয়ার অবস্থার সম্মুখীন হয়।