মেটারনিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য -
অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স ক্লেমেন্স উইনজেল ফন মেটারনিখ তাঁর যে দমনমূলক নীতিগুলির দ্বারা অস্ট্রিয়া তথা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রগতিশীল আদর্শগুলির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল ও রক্ষণশীল আদর্শকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। মেটারনিখের এই কার্যকলাপকে মেটারনিক ব্যবস্থা বলা হয়। নিন্মে মেটারনিখ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হল -পুরাতনতন্ত্র ঃ মেটারনিক ইউরোপে মধ্যযুগীয় অভিজাততন্ত্র, পুরোহিততন্ত্র, বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র, ক্যাথোলিক গির্জার প্রাধান্য ইত্যাদি প্রাচীন ভাবধারাগুলিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে আজীবন লড়াই চালিয়েছিলেন।
বিপ্লবের বিরোধিতা ঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব এবং বিপ্লব-প্রসূত আধুনিক ভাবধারা, যেমন- উদারতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে এগুলি রাজনৈতিক মহামারি ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি মনে করতেন বিপ্লবী ভাবধারা জীবাণুর মত এক দেশ থেকে আর এক দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
পরিবর্তনের বিরোধিতা ঃ মেটারনিক চেয়েছিলেন দেশে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। মেটারনিক ব্যবস্থার মূল কথাই ছিল পরিবর্তনের বিরোধিতা করা। মেটারনিখ ছিলেন পরিবর্তন বিরোধী তাই তিনি ইউরোপের সব রাজাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজত্ব করুন, কিন্তু কোন সংস্কার বা পরিবর্তন করবেন না।
অস্ট্রিয়ার প্রধান্য রক্ষা করা ঃ অস্ট্রিয়ায় বহু জাতি, বহু ভাষা ও বহু ধর্মের মানুষ বসবাস করত।এরফলে সেখানে বিপ্লব-প্রসূত ভাবধারাগুলির প্রবেশ ঘটলে অস্ট্রিয়ার সাম্রাজ্যের ভাঙন ধরত। এই কারণে পুরাতনতন্ত্র ফিরিয়ে এনে অস্ট্রিয়াকে রক্ষা করাই ছিল মেটারনিক ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়া মেটারনিক ব্যবস্থার অন্য একটি বৃহৎ উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় রাজনীতিতে যেকোন উপায়ে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য ও নেতৃত্ব বজায় রাখা।
ইউরোপে পদক্ষেপ ঃ মেটারনিখ অস্ট্রিয়ায় রক্ষণশীল নীতি চালু করলেও তিনি আশঙ্কা করেন যে, ইউরোপের অন্যান্য দেশে বিপ্লবী ভাবধারা ছড়িয়ে পড়লে তা অস্ট্রিয়ায় ঢুকে অস্ট্রিয়ার সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দেবে। এজন্য অস্ট্রিয়ার পাশাপাশি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও তিনি আধুনিক ভাবধারা প্রতিহত করে প্রতিক্রিয়াশীল ও রক্ষণশীল ভাবধারার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন।
মূল্যায়ন ঃ মেটারনিক চেয়েছিলেন ইউরোপে আধুনিক উদারনৈতিক গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের ভাবধারা ধ্বংস করে পুরাতন রক্ষণশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীল নীতি বজায় রাখতে। তবে তিনি পুরাতন সমাজব্যবস্থার ধ্বংস কিছুদিন বিলম্বিত করতে পেরেছিলেন কিন্তু তা এড়াতে পারেননি। অবশেষে মেটারনিকের পতন ঘটলে সেখানে পুরাতন তন্ত্রের অবসান ঘটে এবং আধুনিক জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ঘটে।
আরও পড়ুন ঃ