ইংল্যান্ডে নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার প্রভাব -
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রি (১৮০৬ খ্রিস্টাব্দ) -র মাধ্যমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে "মহাদেশীয় ব্যবস্থা" নামে একটি অর্থনৈতিক অবরোধ ব্যবস্থা জারি করেছিলেন। নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ঘোষণার লক্ষ্য ছিল ইউরোপের বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের বিক্রি কমিয়ে ফ্রান্সের পণ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং এভাবে ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করে দেওয়া। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ইংল্যান্ডের ওপর কি প্রভাব ফেলেছিল তা নিন্মে আলোচনা করা হল -
প্রাথমিক পর্যায়ে ইংল্যান্ডে ক্ষতি ও ফ্রান্সের লাভ ঃ নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা জারি করলে প্রথম দিকে ইংল্যান্ড প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়ে। এই ঘোষণার প্রথমদিকে ইউরোপে ব্রিটিশ পণ্যের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়, কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, বেকারত্ব সৃষ্টি হয়, খাদ্যাভাব দেখা যায়। এরফলে ইংল্যান্ড অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে।
নতুন বাজার দখল ঃ প্রথম দিকের ক্ষতির ধাক্কা সামলে ইংল্যান্ড ব্রাজিল, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, আটলান্টিক ও বাল্টিক উপকূল অঞ্চলের বাজারগুলি দখল করে। সেখানে ইংল্যান্ড তার পণ্য সামগ্রী বিক্রি করতে শুরু করলে পুনরায় ব্রিটিশ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়।
ফ্রান্সের নৌশক্তির অভাব ঃ নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ ঘোষণা করলেও ইংল্যান্ড গোপনভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাদের পণ্য রপ্তানি করতে থাকে। এমনকি ব্রিটিশ পণ্য চোরাপথে ফ্রান্সেও প্রবেশ করে। নেপোলিয়ন নিজে ইংল্যান্ড থেকে সেনাদের পোশাক ও জুতো আমদানি করত। ফ্রান্সের কাছে পর্যাপ্ত নৌশক্তির অভাব থাকার কারণে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল জারি ঃ নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডও ফ্রান্স ও তার মিত্র দেশগুলির বিরুদ্ধে "অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল" জারি করে। এটি ঘোষণা করে ইংল্যান্ড বলে যে, নিরপেক্ষ কোন দেশের জাহাজ যদি ফ্রান্স বা তার মিত্র দেশের বন্দরে যেতে চায় তাহলে সবার আগে তাকে যথার্থ ফি দিয়ে ইংল্যান্ডের কাছ থেকে লাইসেন্স বা অনুমতি নিতে হবে। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইংল্যান্ড ৪৪ হাজারেরও বেশি লাইসেন্স বিক্রি করে। এইভাবে ইংল্যান্ড নিরপেক্ষ দেশগুলিকে অবাধ বাণিজ্যের লাইসেন্স বা আগাম অনুমতিপত্র বিক্রি করে বিপুল অর্থ আয় করে।
মূল্যায়ন ঃ মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে ইংল্যান্ড প্রথম দিকে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও কিছুদিন পর থেকেই ইউরোপের বাইরের দেশগুলিতে পণ্য বিক্রি করে খুব দ্রুত ইংল্যান্ড তার অর্থনীতি ফিরিয়ে আনে। ইংল্যান্ড নিরপেক্ষ দেশগুলিকে অবাধ বাণিজ্যের লাইসেন্স বিক্রি করে তাদের ক্ষতির একাংশ মিটিয়েছিল।
আরও পড়ুন ঃ