বাস্তিল দুর্গের পতন ও তার গুরুত্ব -
ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই বুর্জোয়াদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন কিন্তু তিনি পুরাতনতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য অর্থমন্ত্রী নেকারকে পদচ্যুত করেন। এরপর তিনি প্যারিস ও ভার্সাইয়ে সেনা মোতায়েন করলে প্যারিসের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও দখল করে নেয়। বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্বগুলি নিন্মে আলোচনা করা হল -
রাজার নতি স্বীকার ঃ বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটলে ফ্রান্সের আতঙ্কিত রাজা প্যারিসে এসে বিপ্লবের তেরঙ্গা পতাকা (লাল-নিল-সাদা) -কে ফ্রান্সের প্রতীক হিসাবে মেনে নেন। বিপ্লবী বেইলিকে প্যারিসের পুরসভার মেয়র নিযুক্ত করা হয়। জাতীয় রক্ষাবাহিনীকে সংগঠিত করে বিপ্লবী লাফায়েৎকে এই বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।
স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের ওপর আঘাত ঃ ফ্রান্সের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র এবং মধ্যযুগীয় স্বৈরতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের প্রতীক ছিল কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গ। বিনা বিচারে এখানে প্রজাদের বন্দি করে রাখা হত। বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটলে রাজতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের ওপর আঘাত পড়ে এবং রাজতন্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
জনগণের শক্তিবৃদ্ধি ঃ বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটলে রাজার অক্ষমতা ও জনগণের শক্তির প্রকাশ ঘটে। প্রভাবশালী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পক্ষে যে জয়লাভ করা সম্ভব তা বাস্তিল দুর্গের পতনের ঘটনা প্রমাণ করে দেয়।
অভিজাতদের দেশত্যাগ ঃ বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটলে বহু অভিজাত শ্রেণির মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং প্রাণভয়ে দেশ ত্যাগ করে। ফ্রান্সের অভিজাতরা মনে করেন যে, বিদেশি শক্তির সাহায্য ছাড়া তাদের বিশেষ অধিকার আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।
মূল্যায়ন ঃ বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটলে ফ্রান্সের শাসন ক্ষমতা বুর্জোয়াদের হাতে চলে যায়। এর ফলে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং সাধারণ মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।