মহীশুরের শাসক টিপু সুলতানের সঙ্গে জ্যাকোবিন ক্লাবের সম্পর্ক -
ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনকালে দাক্ষিণাত্যের মহীশুরে হায়দার আলির নেতৃত্বে এক স্বাধীন রাজ্যের জন্ম হয়। হায়দার আলির মৃত্যুর পর তার পুত্র টিপু সুলতান (১৭৮২-৯৯ খ্রিস্টাব্দ) মহীশুরের শাসক হন। তিনি এই রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিলেন। তাঁর কার্যকালের মধ্যে ফ্রান্সের উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন ক্লাবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিন্মে টিপু সুলতানের সঙ্গে জ্যাকোবিন ক্লাবের সম্পর্ক আলোচনা করা হল -
ফ্রান্সের সহায়তা প্রার্থনা ঃ ইংরেজদের হাত থেকে নিজ রাজ্য মহীশুরকে রক্ষা করার জন্য টিপু সুলতান যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ফ্রান্সের বিপ্লবী প্রজাতান্ত্রিক সরকারের কাছে সহায়তা প্রার্থনা। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।
'স্বাধীনতার বৃক্ষ' রোপণ ঃ টিপু সুলতান ছিলেন স্বৈরাচারী শাসক। কিন্তু তিনি ফ্রান্সের জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। তিনি ফ্রান্সের বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের প্রজাতান্ত্রিক সরকারের প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনমে 'Tree of Liberty' বা 'স্বাধীনতার বৃক্ষ' রোপণ করেন।
জ্যাকোবিন ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ ঃ টিপু সুলতান ফ্রান্সের জ্যাকোবিন দলের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং তিনি নিজে এই দলের সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর শাসনকালে তিনি রাজধানীতে জ্যাকোবিন পন্থীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ঃ ফ্রান্সের বিপ্লব এবং সেখানকার বিপ্লবী আদর্শের প্রতি তিনি সমর্থন এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন। যা তাঁর আন্তর্জাতিকতাবাদের পরিচয় বহন করে।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, সুদূর ফ্রান্সের উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন দলের সাথে টিপু সুলতানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তিনি রাজধানীতে 'স্বাধীনতার বৃক্ষ' রোপণ করে জ্যাকোবিন ক্লাবের প্রতি তাঁর সমর্থন ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।