নেপোলিয়ন কি উদ্দেশ্যে মহাদেশীয় অবরোধ ঘোষণা করেছিলেন

মহাদেশীয় অবরোধ ঘোষণার পিছনে নেপোলিয়নের উদ্দেশ্য -

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন ডিক্রির মাধ্যমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে 'মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা' নামে একটি অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করেছিলেন। নেপোলিয়ন যে উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ঘোষণা করেছিলেন তা হল -

ইংল্যান্ডের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস ঃ ইংল্যান্ড ছিল শিল্প-বাণিজ্যে উন্নত। বিশ্বব্যাপী শিল্প-বাণিজ্য ইংল্যান্ডের অর্থনীতিকে মজবুত করেছিল। নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে "দোকানদারের জাতি" বলে অভিহিত করতেন। নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস করে ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিলেন। এর কারণে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইংল্যান্ডের পণ্য আমদানি বন্ধ করার জন্য মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা জারি করেছিলেন।

আর্থিক দুর্দশা ঃ নেপোলিয়ন ভেবেছিলেন মহাদেশীয় অবরোধের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের শিল্প বাণিজ্য ধ্বংস করতে পারলে ইংল্যান্ডের কলকারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাবে এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও নৌকর্মী বেকার হয়ে পড়বে। এরফলে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।

ফ্রান্সের শিল্পায়ন ঃ ইংল্যান্ডের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস করে ইউরোপের দেশগুলিতে ব্রিটিশ পণ্যের আমদানি বন্ধ করতে পারলে সেখানে পণ্যসামগ্রীর শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এরপর এই পণ্য শূন্যতার জায়গা ফ্রান্স তার পণ্যসামগ্রী দিয়ে পূর্ণ করবে। ফলে ফ্রান্সের ব্যাপক ও দ্রুত শিল্পায়ন ঘটবে। এইভাবে ফ্রান্সের অর্থনীতি মজবুত হবে।

মর্যাদা বৃদ্ধি ঃ ইউরোপের বাজারে ব্রিটিশ পণ্য বন্ধ করে ফ্রান্সের পণ্যদ্রব্য ছড়িয়ে পড়লে ফ্রান্সের শিল্পায়ন দ্রুতগতিতে ঘটবে। এরফলে বিশ্ববাজারে ফ্রান্সের মর্যাদা বৃদ্ধি ঘটবে।

রাজনৈতিক লক্ষ্য ঃ নেপোলিয়ন মনে করেছিলেন, ইংল্যান্ডকে পদানত করে ফ্রান্সের শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে তিনি ফ্রান্সের মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন এবং তাঁর সিংহাসনের স্থায়িত্ব বেড়ে যাবে।

মূল্যায়ন ঃ ইংল্যান্ডের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস করে ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করে দেওয়ার  জন্য নেপোলিয়ন এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। এককথায় বলতে গেলে ইংল্যান্ডকে পদানত করাই ছিল মহাদেশীয় ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে শেষপর্যন্ত এই ব্যবস্থা ব্যর্থই হয়েছিল। 

Post a Comment

Previous Post Next Post