ফ্রান্সের ক্ষমতা দখলে নেপোলিয়নের সাফল্যের কারণগুলি উল্লেখ করো

ফ্রান্সের ক্ষমতা দখলে নেপোলিয়নের সাফল্যের কারণ -

১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ডাইরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটিয়ে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট 'কনসাল' হিসাবে ফ্রান্সের শাসন ক্ষমতা দখল করে। ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'সম্রাট' উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। নেপোলিয়নের ব্যক্তিগত গুণাবলী ও তৎকালীন ফ্রান্সের পরিস্থিতি তাঁর সাফল্যে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। ফ্রান্সের ক্ষমতা দখলে নেপোলিয়নের সাফল্যের পিছনে নানা কারণ বিদ্যমান ছিল। যেমন -

নেপোলিয়নের গুণাবলী ঃ নেপোলিয়নের ব্যক্তিগত গুণাবলি, চমকপ্রদ ব্যক্তিত্ব ও বাক্পটুতা তাঁর সাফল্যের অন্যতম কারণ। এছাড়া তুলোঁ বন্দর উদ্ধার, ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও ইতালির যুদ্ধে ধারাবাহিক জয়লাভ তাকে ফ্রান্সের সাধারণ জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। এককথায় বলা যায়, তৎকালীন সময়ে ফ্রান্সের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।

ডাইরেক্টরির অপশাসন ঃ ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ফ্রান্সে ডাইরেক্টরি শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ডাইরেক্টররা ছিলেন অপদার্থ এবং দুর্নীতিগ্রস্থ, ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং খাদ্যাভাব দেশকে তীব্র সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। 

বিপ্লব সম্পর্কে হতাশা ঃ সন্ত্রাসের শাসনকালে সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ফলে মানুষের মনে বিপ্লব সম্পর্কে হতাশার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে মানুষ মনে করে যে, একমাত্র নেপোলিয়নের মত শক্তিশালী সেনাপতিই পারবে দেশে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে এবং মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা দিতে।

সুবিধাবাদ ঃ নেপোলিয়ন ছিলেন অত্যন্ত সুযোগসন্ধানী এবং সুবিধাবাদী। একসময় তিনি উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন দলের সদস্য ছিলেন এবং এই দলের সমর্থনে প্রচারপত্র রচনা করেছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাসের রাজত্বের সময় তিনি সুযোগ বুঝে রোবসপিয়ারের পতন ঘটানোর জন্য বিরোধীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। যা তাঁর সাফল্যের কারণ হিসাবে ধরা যেতে পারে।

বিপ্লবী আদর্শ ঃ নেপোলিয়নের বিপ্লবের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম, বিপ্লবী সংস্কার প্রবর্তন, বিরোধী দলগুলির প্রতি উদার মনোভাব ইত্যাদি দেশের সাধারণ মানুষকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। এইভাবে তিনি 'বিপ্লবের প্রতীক' -এ পরিণত হয়েছিলেন।

মূল্যায়ন ঃ নেপোলিয়নের ক্ষমতা লাভের পথ প্রশস্ত করেছিল তাঁর প্রতিভা ও সামরিক সাফল্য। রাজনৈতিক সংঘাত, বিরামহীন নির্বাচন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব-সহ আরও নানা সমস্যায় দেশের জনগণ জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। তারা এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য নেপোলিয়নের মত শক্তিশালী সামরিক নেতার ওপর আস্থা রেখেছিল। 

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post