ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত নীতি গুলি আলোচনা করো

ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত নীতি -

১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ভিয়েনা সম্মেলন প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক কেটেলবি বলেছেন, ভিয়েনা সম্মেলনের নেতৃবৃন্দ ইউরোপের পুনর্গঠনের উদ্দেশ্য তিনটি নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। এই নীতিগুলি হল - (i) ন্যায্য অধিকার নীতি (ii) ক্ষতিপূরণ নীতি (iii) শক্তিসাম্য নীতি। নিন্মে ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত এই নীতি গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল -

ন্যায্য অধিকার নীতি ঃ ইউরোপের বিপ্লব পূর্ববর্তী রাজবংশগুলির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য ভিয়েনা সম্মেলনের কর্তারা ন্যায্য অধিকার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এই নীতির দ্বারা -

     (i) ফ্রান্সের বুরবোঁ রাজবংশের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।

     (ii) স্পেন, নেপলস ও সিসিলিতে বুরবোঁ রাজবংশের অপর একটি শাখার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা।

     (iii) হল্যান্ডে অরেঞ্জ বংশের প্রতিষ্ঠা।

     (iv) মধ্য ইতালিতে পোপ ক্ষমতা লাভ করেন।

     (v) স্যাভয়, জেনোয়া, সার্ডিনিয়া ও পিডমেন্টে স্যাভয় বংশের প্রতিষ্ঠা।

     (vi) এই নীতির মাধ্যমে ইতালি ও জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

ক্ষতিপূরণ নীতি ঃ নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, ইংল্যান্ড, রাশিয়া ও সুইডেনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তাই ভিয়েনা সম্মেলনের ক্ষতিপূরণ নীতির মাধ্যমে এইসব দেশগুলি বিভিন্ন ভূখণ্ড দখল করে নেয়।

শক্তিসাম্য নীতি ঃ ফ্রান্স ভবিষ্যতে যাতে শক্তিশালী হয়ে পুনরায় ইউরোপের শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে এবং চতুর্থ শক্তিজোট অর্থাৎ মিত্রশক্তি ভুক্ত কোন দেশ যাতে অধিক শক্তিশালী হতে না পারে তার জন্য ভিয়েনা সম্মেলনে শক্তি সাম্য নীতির প্রতিষ্ঠা করা হয়।

মূল্যায়ন ঃ ভিয়েনা সম্মেলনের নীতি গুলি ছিল প্রগতি বিরোধী। কিন্তু এই সম্মেলনের ফলে ইউরোপে মোটামুটি ভাবে চল্লিশ বছর  শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠার ফলে এই সময় সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নতি সম্ভব হয়েছিল। বলা বাহুল্য, ভিয়েনা সম্মেলনের কর্মকর্তারা সর্বপ্রথম নিজের স্বার্থ রক্ষা করে এবং তারপর সম্মেলনের নীতি গুলি কার্যকর করে।

Post a Comment

Previous Post Next Post