মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য নেপোলিয়নের উদ্যোগ -
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের অর্থনীতিকে দুর্বল করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ঘোষণা। তিনি ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন ডিক্রি, ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে মিলান ডিক্রি ও ওয়ারশ ডিক্রি, ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে ফঁতেনব্লু ডিক্রি জারি করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। এই ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য নেপোলিয়ন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। যেমন -
প্রাশিয়া, রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার উদ্যোগ ঃ ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়া, ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া এবং ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া নেপোলিয়নের কাছে পরাজিত হয়। ফলে এই সব দেশগুলি নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার নীতিগুলি মেনে নেয়।
পর্তুগাল দখল ঃ ইংল্যান্ডের মিত্র দেশ পর্তুগাল মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়ন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের ওপর দিয়ে গিয়ে পর্তুগাল দখল করে।
স্পেন দখল ঃ ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগাল দখল করে ফেরার পথে স্পেনের জনগণ নেপোলিয়নের ওপর ক্ষুব্ধ হলে নেপোলিয়ন স্পেন দখল করে এবং সেখানে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করে (১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে)।
সুইডেন দখল ঃ সুইডেন অবরোধ ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়নের মিত্র দেশ রাশিয়া সুইডেন আক্রমণ করে সেখানে মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে বাধ্য করে।
পোপ বন্দি ঃ রোমের শাসক পোপ নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন তাকে বন্দি করে।
হল্যান্ড অভিযান ঃ হল্যান্ডের ওলন্দাজ বণিকরা নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলে ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন হল্যান্ড অভিযান করেন।
জার্মানির উপকূল দখল ঃ হেলিগোল্যান্ডে ব্রিটেনের চোরা কারবার বন্ধ করতে ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন জার্মানির উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয়।
মূল্যায়ন ঃ নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে পদানত করতে তাঁর মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ঘোষণা করেছিলেন এবং সেটি কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। শেষপর্যন্ত নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা ব্যর্থ হয় এবং ইংল্যান্ড সাফল্য অর্জন করে। এককথায় বলতে গেলে মহাদেশীয় ব্যবস্থাই ছিল নেপোলিয়নের পতনের প্রথম কারণ।