দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা বলতে কী বোঝো

দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা -

পৃথিবীর রাজতন্ত্রের ইতিহাসে, বিভিন্ন দেশের রাজতান্ত্রিক শাসকগণ নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন এবং গড়ে তুলেছেন নিজেদের ইচ্ছামত একটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। এই ধরণের রাজতন্ত্রকে দৈব রাজতন্ত্র বা ঐশ্বরিক অধিকারতন্ত্র নামে পরিচিত। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে বুরবোঁ রাজবংশের রাজারা দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা বিশ্বাস করতেন। নিন্মে দৈব রাজতন্ত্রের ধারণাটি বিশ্লেষণ করা হল -

ঈশ্বরের প্রতিনিধি ঃ দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা অনুযায়ী রাজাকে স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিনিধি রুপে গণ্য করা হত। এই ধারণা অনুসারে, রাজা স্বয়ং ঈশ্বরের কাছ থেকে রাষ্ট্র শাসনের অধিকার পেয়েছেন। রাজা দৈব নির্দেশেই রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনা করেন।

রাজার শ্রেষ্ঠত্ব ঃ দৈব রাজতন্ত্র অনুযায়ী রাজা ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতার অধিকারী। শাসনকার্য পরিচালনার জন্য রাজা শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছেই তাঁর কাজের জবাবদিহি করবেন, অন্য কোন প্রজা বা পার্থিব ব্যক্তির কাছে নয়। 

রাজার অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা ঃ দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা অনুযায়ী রাজা অনিয়ন্ত্রিত ও সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী। তিনি তাঁর রাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা এবং শাসন ব্যবস্থার প্রধান।

দৈব রাজতন্ত্রের ওপর আঘাত ঃ অষ্টাদশ শতক থেকেই দৈব রাজতন্ত্রের ধারনার বিরুদ্ধে ফ্রান্সে 'সামাজিক চুক্তি' মতবাদের প্রসার ঘটতে থাকে। এই মতবাদ ফ্রান্সের দৈব রাজতন্ত্রের ধারনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করে এবং অবশেষে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সের এই ভাবধারা একেবারে ভেঙে পড়ে।

মূল্যায়ন ঃ সাধারণত দৈব রাজতন্ত্রের ধারণাটি ছিল মধ্যযুগীয় একটি ভাবধারা। তবে আধুনিক যুগের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এই ভাবধারার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ শুরু হতে থাকে। দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা ফ্রান্সে একটি চরম স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা স্থাপন করেছিল, কিন্তু ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব তা ধ্বংস হয় এবং ফ্রান্সে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে।

Post a Comment

Previous Post Next Post