প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পার্থক্য

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পার্থক্য - 

মানব সভ্যতা সৃষ্টির পর থেকে পৃথিবীতে যেসব যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দুটি যুদ্ধ হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ) ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ)। বিংশ শতকে ঘটে যাওয়া বিশ্বের এই ভয়াবহ দুটি যুদ্ধের ব্যবধান ছিল মাত্র ২১ বছর। দুটি যুদ্ধেই ভয়াবহ লোকক্ষয়, অর্থব্যয়, রাজনৈতিক হিংসা-প্রতিহিংসা থাকলেও কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন -

বিষয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ব্যাপ্তি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মূলত সীমাবদ্ধ ছিল, ইউরোপের বাইরে এই যুদ্ধের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপ্তি অনেক কম ছিল।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপ্তি অনেক বেশি ছিল। গোটা বিশ্বের প্রায় ৩০ টির ও বেশি দেশ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এই যুদ্ধ ইউরোপের শুরু হলেও এটি এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানেও সংঘটিত হয়েছিল এবং এই যুদ্ধ জল, স্থল, অন্তরীক্ষ সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছিল।
ধ্বংসের পরিমাণ দুটি বিশ্বযুদ্ধই ভয়াবহ হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় কম ভয়াবহ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং এই যুদ্ধের প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় কম ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় অত্যধিক বেশি ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল কল্পনাতীত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অন্তত ৫ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ১ কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছিল।
পারমাণবিক বোমার ব্যবহার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমার আবিষ্কার না হওয়ায় এই যুদ্ধে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথম দিকে পারমাণবিক বোমার আবিষ্কার না ঘটলেও এই যুদ্ধের শেষ পর্বে আমেরিকা পারমাণবিক বোমার আবিষ্কার করে। আমেরিকা ১৯৪৫ সালের ৬ জুন ও ৯ জুন জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করে। যার ফলে জাপানের দুটি শহর ধ্বংস হয়ে যায়।


মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনেক বেশি ভয়াবহ ছিল এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এপ্রসঙ্গে এস. এল. এ. মার্শাল বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমগ্র মানবজাতিকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছিল।

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post