ফ্রান্সের ডাইরেক্টরি শাসনকাল (১৭৯৫-১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ) -
রোবসপিয়ারের মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে দিয়ে ফ্রান্সে জ্যাকোবিন দলের আধিপত্য ধ্বংস হয় এবং সন্ত্রাসের রাজত্বের অবলুপ্তি ঘটে। এরফলে ফ্রান্সের আবার মধ্যপন্থী বুর্জোয়া শ্রেণির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই সময়কালে ফ্রান্সে 'ডাইরেক্টরি শাসন' নামে একটি বিশেষ শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছিল। নিন্মে 'ডাইরেক্টরি শাসন' ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
ডাইরেক্টরি শাসনকালের সূচনা ঃ ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে নতুন সংবিধান চালু হলে ৫ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি 'ডাইরেক্টরি'র হাতে দেশের শাসনভার অর্পণ করা হয়। এতে বলা হয় যে,
(i) ডাইরেক্টরির সদস্যদের কমপক্ষে ৪০ বছর বয়স হওয়া প্রয়োজন।
(ii) প্রত্যেক ডাইরেক্টরির কার্যকালের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
(iii) প্রতিবছর একজন করে ডাইরেক্টর পদত্যাগ করবেন এবং তার জায়গায় নতুন একজন ডাইরেক্টরকে নিয়োগ করা হবে।
বাসকুল নীতি ঃ প্রথম ডাইরেক্টরি শাসনের যে পাঁচজন শাসক ছিলেন তারা ছিলেন প্রত্যেকেই অপদার্থ শাসক। এরা হলেন বারাস। লার্তুনায়েব, রিউবেল, লা র্যাভেলিয়ে, কারনো প্রমুখ। ডাইরেক্টরি শাসনের প্রথম থেকেই এই শাসকরা বামপন্থী জ্যাকোবিন এবং দক্ষিণপন্থী রাজতন্ত্রীদের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। এজন্য তারা উভয় দলের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেন। এদের এই নীতি 'বাসকুল নীতি' নামে পরিচিত।
ক্ষমতা ঃ কিছু কিছু বিষয়ে ডাইরেক্টরি শাসকদের একক ক্ষমতা ছিল। যেমন - দেশীয় শাসন পরিচালনা, স্থানীয় শাসন, সেনাবাহিনী পরিচালনা, বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ ইত্যাদি। এদের আচরণ ছিল রাজতন্ত্রীদের মত। দেশের জন্য কোন আইন প্রণয়ন বা কোন আইন সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষমতা ডাইরেক্টরিদের হাতে ছিল না।
মূল্যায়ন ঃ ফারসি বিপ্লবের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ ও প্রতিক্রিয়াশীল শাসনকাল ছিল ডাইরেক্টরি শাসনকাল। ডাইরেক্টরিদের অপশাসনের সুযোগ নিয়ে ফ্রান্সের সেনাপতি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফারন্সে 'কনসুলেট' -এর শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।