মেহেরগড় সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন -
কৃষিকাজ ঃ মেহেরগড় সভ্যতার মানুষের অর্থনীতির প্রাথমিক উৎস ছিল কৃষিকাজ। এই সভ্যতার মানুষ সর্বপ্রথম পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার দিয়ে জমি চাষ শুরু করেছিল। কৃষিতে জলসেচেরও প্রচলন ছিল। নদীতে খাল কেটে কিংবা বাঁধ দিয়ে চাষের জমিতে জল সরবরাহ করা হত। ফলে এই সভ্যতায় কৃষি ব্যবস্থার প্রভুত উন্নতি ঘটেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা খননকার্য চালিয়ে এই সভ্যতা থেকে গম ও যবের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন।
শিকার ঃ মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম দিকে মানুষ শিকারি জীবন পালন করত। প্রথম প্রথম তারা পশু, মাছ ইত্যাদি শিকারের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ পশুপালনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
পশুপালন ঃ শিকার করতে করতে মেহেরগড় সভ্যতার মানুষ উপলব্ধি করে যে, তারা শিকারকে পোষ মানিয়ে নিজেদের কাছে রাখতে পারবে। তখন থেকেই মানুষ বন থেকে পশুদের ধরে এনে পোষ মানাতে শুরু করে, যা ধীরে ধীরে তাদের অর্থনৈতিক জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে ওঠে। ভেড়া, ছাগল, ষাঁড় ইত্যাদি পশুকে পোষ মাননো হয়েছিল। পশুপালনের মাধ্যমে মানুষ একদিকে যেমন মাংস ও দুধ পেত, অন্যদিকে তেমনই ওইসব পশুকে চাষের কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হত।
শিল্প ঃ মেহেরগড় সভ্যতায় মৃৎ শিল্পের সবচেয়ে বেশি উন্নতি ঘটেছিল। এই সময় কুমোরের চাকা আবিষ্কৃত হয়েছিল, যার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন রকম মাটির পাত্র তৈরি করত। এগুলি তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করত এবং ধীরে ধীরে কিছু মানুষ এটিকে তাদের পেশা হিসাবে বেছে নেয়। এছাড়া এই যুগের মানুষেরা বিভিন্ন মাটির মূর্তি তৈরি করত। মেহেরগড় সভ্যতায় প্রাপ্ত কার্পাস তুলো বীজের নিদর্শন থেকে থেকে বোঝা যায় যে, এই সভ্যতার মানুষেরা বস্ত্রশিল্পের সাথে পরিচিত ছিল। এই সভ্যতার নিদর্শন হিসাবে বিভিন্ন অলংকার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মিলেছে, যা এই সভ্যতার মানুষদের উন্নত অর্থনৈতিক জীবনের পরিচয় বহন করে।
বাণিজ্য ঃ মেহেরগড় সভ্যতার নিদর্শন হিসাবে তামার তৈরি বিভিন্ন সিলমোহর পাওয়া গেছে। যা থেকে এই সভ্যতার মানুষের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কথা জানা যায়। মেহেরগড় সভ্যতার সাথে মধ্য এশিয়া, পারস্য ও আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের বাণিজ্য চলত।