ফ্যাসিবাদ -
সাধারণত ফ্যাসিবাদ বলতে চরমপন্থী ন্যাশনালিস্টদের বোঝায়, যারা গণতন্ত্র মানে না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় তার প্রভাব ইতালিতেও পড়েছিল। সমগ্র ইতালি জুড়ে সৃষ্টি হয় অরাজকতা। বেড়ে যায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম, বেকারত্ব। এই সময় ইতালিতে ক্যাপিটালিস্টদের বিরুদ্ধে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়েছিল ফলে বন্ধ হয়ে যায় কলকারখানা। এইরকম পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের ঠাণ্ডা করে তাদের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য বেনিতো মুসোলিনির নেতৃত্বে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে একটি নতুন দল তৈরি হয়েছিল। যার নাম ছিল ‘ফ্যাসিস্ট’। একটি ইতালিয় শব্দ ‘Fasico’ থেকে ‘ফ্যাসিস্ট’ শব্দটির জন্ম। ফ্যাসিস্ট দল ছিল বলপ্রয়োগ নীতিতে বিশ্বাসী এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব লাফ করাই ছিল ফ্যাসিবাদীদের চরম লক্ষ্য। ‘ফ্যাসিস’ বা দড়িবাঁধা কাঠের দণ্ড ছিল ফ্যাসিবাদী দলের প্রতীক। ফ্যাসিস্ট দলের সদস্যরা কালো রঙের পোশাক পরিধান করতেন, এই কারণে তাদের ‘ব্লাক স্যাট’ নামে অভিহিত করা হত।
মুসোলিনির নেতৃত্বাধীন এই দলের মূল ভিত্তি বা তাদের মূল নীতি ছিল রাষ্ট্রই সকল শক্তির উৎস, রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে কোন কিছুই নেই। তাদের মতে রাষ্ট্রই সব এবং ফ্যাসিবাদে ব্যক্তির কোনরূপ মূল্য নেই। অর্থাৎ বলা যায়, ফ্যাসিবাদী ধারণা ছিল একনায়কতান্ত্রিক। ইটালিতে জন্ম নেওয়া এই ফ্যাসিবাদী ধারনার মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যই যেকোন উপায়ে ছিল রাষ্ট্রের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করা এবং ইটালিকে বিশ্বের দরবারে পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করা। দেশকে সাম্যবাদের প্রভাব মুক্ত করে ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষা করা ছিল ফ্যাসিস্টদের অন্যতম একটি লক্ষ্য। বলাবাহুল্য ফ্যাসিবাদীরা বা ফ্যাসিস্টরা কখনও নিজেদের দেশের বাইরের কোন কিছুই ভাবতেন না।