দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ কি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ -

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর অক্ষশক্তিভুক্ত জার্মানি পূর্ব ইউরোপের পোল্যান্ড আক্রমণ করলে জার্মানির বিরুদ্ধে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিজোট যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। প্রথম দিকে মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে অক্ষশক্তি চমকপ্রদ সাফল্য দেখালেও ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতি জার্মানির বিপক্ষে চলে যেতে থাকে। ফলে জার্মানি পরাজয়ের দিকে এগোতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি নিন্মে আলোচনা করা হল -

ইতালিতে ব্যর্থতা ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই অক্ষশক্তিভুক্ত ইতালি উত্তর আফ্রিকায় ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর কাছে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হিটলার জার্মান সেনাপতি রোমেলকে ইতালির সাহায্যের জন্য পাঠান। কিন্তু ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিও সেখানে পরাজিত হয়। এইভাবে ১৯৪৫ সালের প্রথমদিকে মিত্রবাহিনী হিটলারের হাত থেকে উত্তর ইতালি দখল করে নেয়। 

ফ্রান্সে ব্যর্থতা ঃ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুন মিত্রশক্তির ১ লক্ষ ৫৬ হাজার সেনা ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে অবতরণ করে জার্মানির হাত থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করে। এইভাবে জার্মানির ব্যর্থতা ফ্রান্সেও প্রতিফলিত হয়। 

মিত্রশক্তি কর্তৃক জার্মানি আক্রমণ ঃ যুদ্ধের শুরুর সময়টা জার্মানির অনুকূলে থাকলেও ধীরে ধীরে  মিত্রশক্তি জার্মানির কবলে থাকা সমস্ত অঞ্চলগুলি মুক্ত করতে থাকে। অবশেষে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মিত্রবাহিনী তিনদিক থেকে জার্মানি আক্রমণ করে। এই তিনটি দিক ছিল -

     (i) আইজেনহাওয়ারের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী জার্মানির পশ্চিম অংশ আক্রমণ করে।

     (ii) রাশিয়ার লাল ফৌজ পূর্বদিক থেকে জার্মানি আক্রমণ করে। 

     (iii) মিত্রবাহিনীর একটি অংশ দক্ষিণ দিক থেকে জার্মানিতে প্রবেশ করে। 

মিত্রবাহিনী কর্তৃক বার্লিন দখল ঃ ধীরে ধীরে মিত্রবাহিনী জার্মানির অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে থাকে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে হিটলার ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল হিটলার নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করে করেন। ২ মে রাশিয়ার লালফৌজ বার্লিনে প্রবেশ করে এবং ৭ মে জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। ৮ মে মিত্রশক্তি 'বিজয় দিবস' পালন করে। 

মূল্যায়ন ঃ জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্যে দিয়ে যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, জার্মানির আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়েই এই যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে হিটলার আত্মহত্যা করেছিলেন। এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ই. এল. উডওয়ার্ড বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল হিটলারের যুদ্ধ, তিনিই যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছিলেন, তিনিই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন এবং তাঁর পরাজয়ের মধ্যে দিয়েই এই যুদ্ধের অবসান হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post