গুপ্তযুগের গিল্ড বা নিগম ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য লেখ

 গুপ্তযুগের গিল্ড বা নিগম -

গুপ্তযুগ ছিল ভারতের ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়। একদিকে যেমন কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি, অন্যদিকে তেমনই শিল্প ও বাণিজ্যেরও বিকাশ গুপ্তযুগকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। আর এই শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশ যাতে আরও ভালোভাবে হতে পারে তার জন্য সেযুগের ব্যবসায়ীরা গিল্ড বা নিগম গড়ে তুলেছিল। এটি ছিল এক প্রকার সংস্থা, যার কাজ ছিল কোন দ্রব্যের দাম নির্ধারণ করা। যখন কেউ নতুন ব্যবসা শুরু করতে চাইত তখন তাকে এই গিল্ড বা নিগম বণিকসংঘের কাছ থেকে অনুমতির প্রয়োজন পড়ত। কোন ব্যবসায়ীই নিগমের অনুমতি ছাড়া তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারত না। গুপ্তযুগে গড়ে ওঠা এই গিল্ড বা নিগম নামক বণিকসংঘের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

(i) গঠন পদ্ধতি ঃ কয়েকজন ব্যক্তির সংযোগে এই গিল্ড বা নিগমগুলি গড়ে উঠত, আর এরাই ছিল গিল্ডের পরিচালক। এখানে সবার উপরে থাকতেন একজন অধ্যক্ষ। গিল্ডের অধ্যক্ষের হাতে একটি বিশেষ ক্ষমতা ছিল। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনি কোন ব্যক্তিকে জরিমানা করতে পারতেন। সাধারণত কোন ব্যক্তি গিল্ডের নিয়ম ভঙ্গ করলে অথবা কোন দ্রব্যমূল্যের দামের হেরফের ঘটালে গিল্ডের অধ্যক্ষ তার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঐ নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। এই ক্ষমতার জেরে অধ্যক্ষ মাঝে মাঝে গিল্ডের সদস্যদের গিল্ড থেকে বহিষ্কারও করতেন।

(ii) গিল্ডের প্রকারভেদ ঃ গুপ্তযুগের নিগম বা গিল্ডের সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ও গুপ্তযুগের বিভিন্ন সাহিত্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইসব উপাদান ও সাহিত্য থেকে জানা যায় যে, গুপ্ত যুগে ১৮ ধরণের গিল্ডের অস্তিত্ব ছিল। যথা - তৈলিক শ্রেণির সংঘ, কারিগরদের সংঘ, শ্রেষ্ঠীদের সংঘ, বয়নশিল্পীদের সংঘ-সহ আরও অন্যান্য জিবিকাভিত্তিক শ্রেণির সংঘ।

(iii) গিল্ডের নিয়ম-কানুন ঃ গুপ্তযুগে যেমন ১৮ টি গিল্ড ছিল তেমনই প্রতিটি গিল্ডের নিজস্ব নিয়মকানুন ছিল। গিল্ডগুলি ছিল গুপ্ত সম্রাটদের দ্বারা স্বীকৃত এবং গিল্ডগুলিতে গণতান্ত্রিক সংবিধানের অস্তিত্ব ছিল। গিল্ডের পরিচালনায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভা করা হত। যেখানে গিল্ডের সমস্ত সদস্যদের বাকস্বাধীনতা ছিল। যদি কখনো কেউ গিল্ডের নিয়ম ভঙ্গ করত তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হত। কখনো কখনো সেই ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হত। গিল্ডের সংবিধান তথা নিয়ম মানার জন্য গিল্ডের প্রতিটি সদস্যকেই শপথ গ্রহণ করতে হত। তবে যেকোন ব্যক্তিই সদস্য হতে পারত না, কারণ সদস্যপদ গ্রহণের জন্য সেই ব্যক্তিকে শুদ্ধি পরীক্ষা দিতে হত। গিল্ডগুলি ব্যবসায়ীদের টাকা সুদে দিত। সেই সুদের টাকা দিয়ে গিল্ড বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করত। ধীরে ধীরে গিল্ডগুলির শক্তি বাড়তে থাকে, যার প্রভাব গুপ্ত প্রশাসনেও পড়েছিল। গিল্ডের এইভাবে শক্তি বাড়ার ফলে গুপ্ত রাজাদের রাজত্ব ধরে রাখার জন্য সংকটাপন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

আরও পড়ুন ঃ

➤ গুপ্তযুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি

➤ গুপ্ত যুগকে সুবর্ণ যুগ বলা হয় কেন

Post a Comment

Previous Post Next Post