হিটলারের বিদেশনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করব জার্মানির নাৎসি নেতা "হিটলারের বিদেশনীতি" সম্পর্কে। যেখানে আমরা দেখব বিদেশনীতি বা পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে হিটলারের লক্ষ্য কি ছিল, হিটলার বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কোন কোন আগ্রাসন নীতি গ্রহণ করেছিলেন এইসবগুলি। 


হিটলারের বিদেশনীতি -


প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর জার্মানির মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশকে যেভাবে ভার্সাই সন্ধির জেরে এবং রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও উপনিবেশিক দিক থেকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছিল, তার ফলে সমগ্র জার্মান জাতির মনে মিত্রবাহিনীর প্রতি প্রতিশোধের স্পৃহা জেগেছিল। এই পরিস্থিতির সুযোগে জার্মানির নাৎসি এডলফ নেতা হিটলার নিজ প্রতিভা, কর্মনৈপুণ্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা দুর্দশাগ্রস্ত ও অসম্মানের কবলে নিমজ্জিত জার্মানির জনমনকে অত সহজেই জয় করতে পেরেছিলেন। হিটলার ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির শাসনক্ষমতা দখল করে জার্মানিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর তিনি তাঁর বৈদেশিক নীতির দিকে নজর দিয়েছিলেন। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তিনি উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এক্ষেত্রে হিটলারের লক্ষ্য, বৈদেশিক চুক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

লক্ষ্য ঃ বৈদেশিক নীতি বা পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণে হিটলারের প্রধান লক্ষ্যগুলি ছিল -

     (i) বিদেশনীতির ক্ষেত্রে হিটলারের প্রথম লক্ষ্য ছিল তাঁর নিজ রাষ্ট্র জার্মানিকে ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করা।

     (ii) ভার্সাই সন্ধির সকল শর্তকে নাকচ করে জার্মানিকে মুক্ত করা।

     (iii) জার্মানির বেড়ে চলা জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান জোগাড় করা।

জাতিসংঘ ত্যাগ ঃ ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে জেনেভায় নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে হিটলার দাবি জানিয়েছিল যে, জার্মানি তার সামরিক শক্তি অন্যান্য রাষ্ট্রের সমতুল্য করবে। কিন্তু জার্মানির এই দাবি নাকচ করা হয়। এর ফলে জার্মানি নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ছাড়ার পাশাপাশি জাতিসংঘও ত্যাগ করেছিল। 

বৈদেশিক চুক্তি ঃ হিটলারের বিদেশনীতির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বিভিন্ন দেশের সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত করা। এই চুক্তিগুলির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য ছিল -

     (i) ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি।

     (ii) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত ইঙ্গ-জার্মান নৌচুক্তি।

     (iii) ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি।

     (iv)  রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ)।

আগ্রাসন নীতি ঃ পররাষ্ট্রনীতি বা বিদেশনীতির ক্ষেত্রে হিটলার যেসব আগ্রাসন নীতি গ্রহণ করেছিলেন সেগুলি হল -

     (i) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে গণভোটের মাধ্যমে জার্মানির সার অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেন এবং রাইন ভূখণ্ড দখল করেন।

     (ii) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দেই তিনি স্পেনের বিদ্রোহী নেতা ফ্রাঙ্কোকে সমর্থন করেছিলেন।

     (iii) ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া দখল করেছিলেন এবং 

     (iv) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে চেকোস্লোভাকিয়া দখল করেছিলেন।

মুল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, হিটলার জার্মানিতে একনায়কতন্ত্র স্থাপন করেছিলেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল যেকোন উপায়ে বিশ্বে জার্মানির মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করা। এই উদ্দেশ্যে তিনি যেসব কর্মসূচি পালন করেছিলেন তা একদিক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ডেকে এনেছিল এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন ঃ



Post a Comment

Previous Post Next Post