১৯৮৪ থেকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের বিদেশনীতি বা পররাষ্ট্রনীতি -
বিভিন্ন রাষ্ট্রে যেমন পরিচালকবর্গের পরিবর্তন ঘটলে সেই রাষ্ট্রের বিদেশনীতির পরিবর্তন ঘটে, তেমনই ভারতের ক্ষেত্রেও হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্থান-পতন এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মধ্যে দিয়ে ভারতের বিদেশনীতি বিবর্তিত হয়েছে।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালের ভারতের বিদেশনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর পর তাঁর পুত্র রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। রাজীব গান্ধী ভারতকে একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করে আধুনিক ভারত গড়ে তোলার লক্ষে ভারতের বিদেশনীতি পরিচালনা করেছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতিকল্পে তৎকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুপার কম্পিউটার (Cray XMP24) কেনার ব্যবস্থা করেছিলেন। পাশাপাশি রাজীব গান্ধী 'C DOT' প্রযুক্তি টেলিকমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন।
এই সময় তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্ভাচভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে সহমত গড়ে তোলেন। এছাড়া জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ আফ্রিকার পার্শ্ববর্তী নামিবিয়ার স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য রাজীব গান্ধীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে রাজীব গান্ধী চীন সফরে যান। এই সফরের পর থেকেই ভারত-চীনের সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে থাকে। ফলে দুই দেশের মধ্যেকার অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার অবসান ঘটে এবং নতুন সংকল্প গৃহীত হয়। চীনের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি ও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির ব্যাপারে রাজীব গান্ধী তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী বেনেজির ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল রাজীব গান্ধীর বিদেশনীতির একটি মারাত্মক পরিণতি। দীর্ঘকাল ধরেই শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত তামিল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই চলছিল। এই অবস্থায় রাজীব গান্ধী তৎকালীন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী জয়বর্ধনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তামিল জনগোষ্ঠীর সমর্থনে সংগ্রামরত LTTE -কে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে একটি বৃহৎ ভারতীয় সৈন্যদল ITTB -কে শ্রীলঙ্কায় প্রেরণ করেন। শেষপর্যন্ত ভারতীয় সেনা পর্যুদস্ত হয় এবং ভারতীয় সেনাকে শ্রীলঙ্কা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এই ঘটনায় রাজীব গান্ধী মিশর প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হন, যা তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর কারণ।
ভি. পি. সিং-এর নেতৃত্বে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় মোর্চা সরকার গঠিত হয়। এক্ষেত্রে ভারতের বিদেশনীতির কোন উল্লেখযোগ্য দিক ছিল না। এই মোর্চা সরকার ছিল খুব দুর্বল এবং এই সরকার 'মণ্ডলায়ন' নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিল যে, এই সময় বিদেশনীতি বা পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বেশি মাথা ঘামায়নি। এই সময় তৎকালীন ভারতের বিদেশমন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী আই. কে. গুজরালের অনুসৃত নীতি 'গুজরাল ডকট্রিন' প্রতিবেশী দেশগুলি সম্পর্কে নম্র মনোভাব গ্রহণ ও আপসে বিরোধ মীমাংসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করলে ভারতের বিদেশনীতি কিছুটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এইসময় থেকেই বিশ্বায়নের সূচনা হতে থাকে এবং অন্যান্য দেশের মতো ভারতও অর্থনৈতিক উদারীকরণের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকে।