বিধান পরিষদ (Legislative Council) -
যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারতে যেমন একটি কেন্দ্রীয় আইনসভা আছে তেমনই ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেও একটি করে রাজ্য আইনসভা রয়েছে। কোন কোন রাজ্যের আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট এবং কোন কোন রাজ্যের আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট। রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষের নাম বিধান পরিষদ এবং নিন্ম কক্ষের নাম বিধান সভা। রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদ সম্পর্কে নিন্মে আলোচনা করা হল -
নির্বাচন পদ্ধতি ঃ
(i) বিধান পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য বিধান সভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন।
(ii) এক-দ্বাদশাংশ সদস্য নির্বাচিত হন শিক্ষকদের দ্বারা।
(iii) এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচিত হন লোকাল বডি অর্থাৎ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক সংস্থাগুলির দ্বারা।
(iv) এক-দ্বাদশাংশ সদস্য নির্বাচিত হন সাবালক ও স্নাতক রাজ্যবাসীর দ্বারা।
(v) বিধান পরিষদের অবশিষ্ট সদস্যরা রাজ্যের রাজ্যপালের দ্বারা নির্বাচিত হন। তবে রাজ্যপাল এই নির্বাচন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শেই করে থাকেন।
কার্যকালের মেয়াদ ঃ বিধান পরিষদ রাজ্য আইনসভার একটি স্থায়ী কক্ষ। প্রতি ২ বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন। প্রত্যেক সদস্যের কার্যকাল এককভাবে সর্বাধিক ৬ বছর হতে পারে।
সর্বাধিক ও সর্বনিন্ম সদস্য সংখ্যা ঃ ভারতীয় সংবিধানের ১৭১ -এর ১ নং ধারা অনুযায়ী কোন রাজ্যের বিধান পরিষদের সদস্য সংখ্যা সর্বাধিক ঐ রাজ্যের বিধানসভার সদস্য সংখ্যার চেয়ে এক-তৃতীয়াংশের (১/৩) বেশি হবে না অথবা ৪০ জনের কম হবে না। তবে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধান পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৩৬ জন।
সদস্যদের যোগ্যতা ঃ বিধান পরিষদের সদস্য হতে গেলে সেই ব্যক্তিকে -
(i) ভারতীয় নাগরিক হওয়া আবশ্যক।
(ii) প্রার্থীদের ন্যূনতম বয়স ৩০ বছর হওয়া আবশ্যক।
(iii) কোন ব্যক্তি যদি বিকৃতমস্তিষ্ক অথবা আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয় তবে সেই ব্যক্তি বিধান পরিষদের সদস্যপদ লাভ করতে পারবে না।
কার্যপরিচালনা ঃ বিধান পরিষদের সদস্যদের মধ্যে থেকে এবং সদস্যদের দ্বারা একজন চেয়ারম্যান এবং একজন ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, যারা বিধান পরিষদ সভার কার্যপরিচালনা করেন।
ক্ষমতা ও কার্যাবলী ঃ বিধান পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলীগুলি হল -
(i) অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য যেকোন বিল বিধান পরিষদে উত্থাপিত হতে পারে।
(ii) কোন বিল পরিষদে অনুমোদন না পেলে পুনর্বিবেচনার জন্য বিধানসভায় ফেরত যায়। বিধান পরিষদ কোন বিলকে কিছু দিনের জন্য পাস হওয়া থেকে পিছিয়ে দিতে পারে, সেটিকে বাতিল করতে পারে না।
(iii) বিধান পরিষদের অন্যতম একটি কাজ হল বিধানসভার কাজে সহযোগিতা করা।
বিধান পরিষদ গঠন ও বিলুপ্তির সাংবিধানিক সংস্থান -
(i) ভারতীয় সংবিধানের ১৬৯ নং ধারার অধীনে কোন এককক্ষ আইনসভাবিশিষ্ট অঙ্গরাজ্যে বিধান পরিষদ গঠন ও কোন দ্বিকক্ষ আইনসভা বিশিষ্ট অঙ্গরাজ্যে বিধান পরিষদ বিলুপ্তির অধিকার প্রদান করা হয়েছে সংসদকে।
(ii) যদিও বিধান পরিষদ গঠন ও অবলুপ্তির প্রস্তাব সংসদে উত্থাপনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধানসভায় প্রস্তাবটি বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় (উপস্থিত এবং ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে) পাস হওয়া আবশ্যক।
(iii) বিধানসভায় বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদিত (বিধান পরিষদ গঠন বা অবলুপ্তির) প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপিত হয় এবং সংসদে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদিত হওয়ার পর প্রস্তাবটি কার্যকর হয়।
(iv) এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট বিধান সভায় বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদিত 'বিধান পরিষদ গঠন অথবা অবলুপ্তির প্রস্তাব'টি সংসদে প্রেরিত হলে, সেটিকে অনুমোদন প্রদানে সংসদ বাধ্য নয়। প্রস্তাবটিকে অনুমোদন না করার অধিকার সংসদের হাতে রয়েছে।
মূল্যায়ন ঃ রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদ থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন সময় বহু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বহু রাজ্যে মূলত রাজনৈতিক কারণে বিধান পরিষদ টীকে রয়েছে। ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের বিলুপ্তি ঘটে।