নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ / অভিযান -
পর্তুগাল ও স্পেনের সঙ্গে উপদ্বীপের যুদ্ধ চলাকালীন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন তাঁর 'গ্র্যান্ড আর্মি' বা 'মহান সেনাদল'-এর ৬ লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন। নিন্মে নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ / অভিযানের বিবরণ তুলে ধরা হল -
পোড়ামাটির নীতি ঃ নেপোলিয়নের আক্রমণে রুশ বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে না গিয়ে ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে। তারা রাস্তাঘাট, সেতু, মাঠ ও গোলার ফসল ধ্বংস করে দেয় এবং পানীয় জলে বিষ মিশিয়ে দেয়। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে রুশ বাহিনীর এই নীতি "পোড়ামাটির নীতি" নামে পরিচিত। ধীরে ধীরে নেপোলিয়নের বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
বোরোডিনো-র যুদ্ধ ঃ ফরাসি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে রুশ সেনাপতি কুতুজভের নেতৃত্বে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে বোরোডিনোর যুদ্ধে হয়। এই যুদ্ধে নেপোলিয়ন রুশ বাহিনীকে পরাজিত করেন।
মস্কো অভিযান ঃ বোরোডিনোর যুদ্ধে জয়লাভের পর ফরাসি সৈন্যরা ৭৫ মাইল দুর্গম পথ অতিক্রম করে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে পথে খাদ্যাভাব, রাশিয়ার শৈত্য আবহাওয়া, বাসস্থানের অভাব ও মহামারির কবলে পড়ে প্রচুর ফরাসি সৈন্যের মৃত্যু ঘটে। ফলে ফ্রান্স দুর্বল হয়ে পড়ে।
রাশিয়া ত্যাগ ঃ ফরাসি বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে রাশিয়ার শীত, তুষারপাত, ঝড়, খাদ্যাভাব ও 'টাইফাস' নামক জরের প্রকোপে প্রচুর ফরাসি সৈন্য মারা গেলে দিশেহারা হয়ে নেপোলিয়ন তাঁর 'মহান সেনাদল'-এর বাকি সৈন্যদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
ফরাসি বাহিনীর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন ঃ স্বদেশে ফেরার পথেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাশিয়ার গেরিলা বাহিনীর আক্রমণে প্রচুর ফরাসি সৈন্যের মৃত্যু ঘটে। মাত্র ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার 'গ্র্যান্ড আর্মি'র সৈন্য ফ্রান্সে ফিরতে সক্ষম হয়েছিল।
মূল্যায়ন ঃ রাশিয়া আক্রমণ করে নেপোলিয়নের 'গ্র্যান্ড আর্মি' বা 'মহান সেনাদল'-এর চরম ক্ষতি হয়। বোরোডিনোর যুদ্ধে জয়লাভ ও মস্কো দখল করেও শেষপর্যন্ত চরম হতাশায় ফরাসি বাহিনীকে স্বদেশে ফিরতে হয়।