ফরাসি বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা / অবদান -
ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডাকে। বুর্জোয়ারা সেখানে তিন সম্প্রদায়ের একত্রে বসা এবং সদস্যদের মাথাপিছু ভোটদানের অধিকার জানায়। অবস্থা হাতের নাগালের বাইরে যেতে দেখে রাজা বাধ্য হয়ে তা মেনে নেয়। কিন্তু এর কিছু দিনের মধ্যেই গোটা দেশ জুড়ে খাদ্যাভাব, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় শ্রেণির লোকেরা বিদ্রোহে ঝাপিয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহে শুধু পুরুষরা নয়, তাদের পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেণির নারীরাও এই বিদ্রোহে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। নিম্নে ফরাসি বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা বা অবদান আলোচনা করা হল -
খাদ্যাভাব ঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় ভাগে ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলগুলিতে প্রচণ্ড খাদ্যাভাব সৃষ্টি হয়। খাদ্যের দাবিতে প্যারিসে সাধারণ মানুষ দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ৫ অক্টোবর প্রবল বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে প্রায় ৬ হাজার মহিলা ভার্সাই রাজপ্রাসাদ অভিযান করে। মহিলাদের অভিযানের স্লোগান ছিল 'রুটি চাই'। জাতীয় রক্ষাবাহিনীর ২০ হাজার সদস্য লাফায়েৎ-এর নেতৃত্বে নারীদের এই মিছিল অনুসরণ করতে থাকে।
বিপ্লবী নারীদের দাবি ঃ ফরাসি বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী নারীদের প্রধান দাবি ছিল সস্তায় রুটি সরবরাহ করতে হবে এবং বিপ্লবের তেরঙ্গা পতাকার অবমাননাকারীদের শাস্তি দিতে হবে।
রাজতন্ত্রের শবযাত্রা ঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর আন্দোলনকারী নারীরা ভার্সাই রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে রক্ষীদের হত্যা করে সমগ্র রাজপরিবারের সদস্যদের বন্দি করে। বন্দি রাজপরিবারকে তারা প্যারিসে আসতে বাধ্য করে। এই ঘটনাকে 'রাজতন্ত্রের শবযাত্রা' বলা হয়।
মূল্যায়ন ঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। বিপ্লবের মাধ্যমে নারীরা কিছু অধিকার লাভ করতে পেরেছিল। সেগুলি হল মা-বাবার অনুমতি ছাড়া বিবাহ করা, রাজনৈতিক ক্লাব গঠন করা এবং অবৈধ সন্তানের স্বীকৃতি লাভ করা ইত্যাদি।