ফ্রান্সের ইতিহাসে ৪ আগস্টের গুরুত্ব -
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারী বুর্জোয়া নেতারা সামন্তপ্রভুদের অধিকার ধ্বংসের জন্য বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়েছিল। এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক কোবানের মতামত হল, অষ্টাদশ শতক ছিল ফ্রান্সের আধুনিক যুগের সূতিকাগার। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটানোর জন্য ফ্রান্সের সংবিধান সভা কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয়। নিন্মে ফ্রান্সের ইতিহাসে ৪ আগস্টের গুরুত্ব আলোচনা করা হল -
সংবিধান সভা গঠন ঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সংবিধান সভা গঠন করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা। ফ্রান্সের মূল সংবিধান রচনা করার আগে এই সভা দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট তৃতীয় শ্রেণির চাপের কারণে যাজক ও অভিজাতরা একটি ঘোষণার মাধ্যমে তাদের সামন্ততান্ত্রিক অধিকারগুলি ত্যাগ করে।
সামন্তকর বিলোপ ঃ ফ্রান্সের জাতীয় সভা ১১ আগস্ট একটি ঘোষণার মাধ্যমে জানিয়ে দেয় যে - এখন থেকে সামন্তপ্রথা বিলুপ্ত হল। এই ঘোষণার আগে অভিজাত সামন্তপ্রভুরা তৃতীয় শ্রেণির দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে 'করভি' (শ্রমকর) -সহ বিভিন্ন সামন্তকর আদায় করত এবং গির্জাগুলি আদায় করত 'টাইদ' (ধর্মকর)। ফ্রান্সের সংবিধান সভা এইসব সামন্ততান্ত্রিক করের বিলুপ্তি ঘটান।
সামন্তদের অধিকার বিলোপ ঃ সংবিধান সভার ঘোষণার মাধ্যমে সামন্ত ও অভিজাতদের বিশেষ অধিকারের বিলোপ ঘটানো হয়। এছাড়া ভুমিদাস প্রথা, সামন্তপ্রভুদের জমিদারি স্বত্ব, বংশকৌলীন্যের অধিকার, খেতাব, একচেটিয়া সরকারি চাকরি লাভের অধিকার ইত্যাদি প্রথার অবসান ঘটানো হয়। রাজার খাস জমি ও গির্জার জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
মূল্যায়ন ঃ বিপ্লবীদের কাছে যাজক ও অভিজাতদের বিশেষ অধিকার ছিল শত্রু এবং সাম্য ছিল তাদের লক্ষ্য। ফ্রান্সের সংবিধান সভা সম্পূর্ণরূপে সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটাতে ব্যর্থ হলেও এই সভার ঘোষণাগুলি সামন্ততন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল। অবশেষে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল সামন্ততন্ত্রের বিলোপ ঘটানো এবং ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা ইত্যাদি।