বলশেভিক বিপ্লবের গুরুত্ব -
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লব ছিল ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি যুগান্তকারী বিপ্লব। বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব রাশিয়া ও ইউরোপ সহ প্রায় সমগ্র বিশ্বের ওপর পড়েছিল। এই বিপ্লবের ফলে মানুষের মনে নতুন চেতনার সঞ্চার ঘটেছিল, যা বিশ্ব আন্দোলনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। বলশেভিক বিপ্লবের গুরুত্বগুলি হল –
(i) এই বিপ্লবের ফলে বলশেভিকরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তাদের এই সাফল্যের ফলে সর্বত্রই সাম্যবাদী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
(ii) রাশিয়ায় বলশেভিকরা তাদের ক্ষমতা স্থাপন করলে সেখানে কমিউনিস্ট সরকারের গুরুত্ব বেড়ে যায়। রাশিয়ায় কমিউনিস্টদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলে তা সমগ্র ইউরোপ-সহ গোটা বিশ্বকে একটি নতুন আদর্শের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। এইভাবে বেড়ে চলা কমিউনিস্ট তথা সমাজতান্ত্রিক আদর্শবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি বিভিন্নভাবে সচেষ্ট হয়। ফলে সমগ্র ইউরোপ-সহ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি একটি জটিল আকার ধারণ করে।
(iii) রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের ফলে সাম্যবাদী রাশিয়া ও পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।
(iv) একদিকে যেমন সাম্যবাদের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরদিকে তেমনই এই প্রভাব রোধ করার জন্য ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের ফ্যাসিবাদী তোষণ নীতি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল।
(v) রাশিয়া ও ইউরোপে এসব চলাকালীন চিন দ্রুত গতিতে সমাজতন্ত্রের দিকে এগোতে থাকে। চিনে মাও-সে-তুঙ -এর কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে।
(vi) ইউরোপ যেমন একদিকে সাম্যবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে চাইছে অন্যদিকে সেইসময় এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয় উপদ্বীপ, ভারত ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে সাম্যবাদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বলশেভিক বিপ্লবের ফলেই সেই সময় সমগ্র বিশ্বে চলতে থাকা অত্যাচার, শোষন ও সাম্রাজ্যবাদের থেকে মানুষ মুক্তির পথ পেয়েছিল। এই সব অত্যাচারিত, শোষিত মানুষদের জাতীয়তাবাদী মুক্তি আন্দোলনে বিশেষভাবে অনুপ্রানিত করেছিল বলশেভিক বিপ্লব।