সুইজারল্যান্ডের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো

সুইজারল্যান্ডের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য -

প্রতিটি দেশেরই একটি নির্দিষ্ট সংবিধান আছে। আর সেই সংবিধানের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। তেমনই সুইজারল্যান্ডের সংবিধানেরও কতকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। এগুলি হল -

লিখিত সংবিধান ঃ সুইজারল্যান্ডের সংবিধান হল একটি লিখিত সংবিধান। এই সংবিধানে দুই ধরণের সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের বিষয়টি লিপিবদ্ধ করা আছে। সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে কিছু কিছু প্রথা ও রীতিনীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

সংবিধানের আকার ঃ সুইজারল্যান্ডের সংবিধানটি আকারে বড়। এই সংবিধানে ৩ টি অধ্যায়-সহ ১২৩ টি ধারা লক্ষ্য করা যায়। সুইস সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এবং ক্যান্টন সরকারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে।

সমপ্রতিনিধিত্ব ঃ প্রতিটি ক্যান্টন থেকে সমান সংখ্যক প্রতিনিধি সুইস আইনসভার উচ্চকক্ষে প্রেরিত হয়। ২২ টি পূর্ণ ক্যান্টন থেকে ২ জন করে এবং ৬ টি অর্ধ ক্যান্টন থেকে ১ জন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষ বা রাজ্য পরিষদে পাঠানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা ঃ সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে ১ নং ধারায় সুইজারল্যান্ডকে একটি রাষ্ট্রসমবায় রূপে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে দেশের জাতীয় সরকার এবং ২২ টি ক্যান্টনের মধ্যে বন্টিত ক্ষমতার বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ঃ সুইজারল্যান্ডে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা দেখা যায়। আইনসভার উচ্চকক্ষের নাম 'রাজ্যপরিষদ' এবং নিন্মকক্ষের নাম 'জাতীয় পরিষদ'। 

অনমনীয় সংবিধান ঃ সুইজারল্যান্ডের সংবিধানটি অনমনীয় সংবিধান। অর্থাৎ এটি দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। সংবিধান সংশোধন করতে গেলে ক্যান্টনগুলির সম্মতি প্রয়োজন অথবা গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে।

সাধারণতান্ত্রিক সংবিধান ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সুইজারল্যান্ডের সংবিধানটি একটি সাধারণতান্ত্রিক সংবিধান। সুইস সংবিধানের ৬ নং ধারা অনুযায়ী বলা হয়েছে যে, ক্যান্টনগুলিকে রক্ষা করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের এবং প্রতিটি ক্যান্টনে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান কার্যকরী হবে। সুইজারল্যান্ডের প্রতিটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতির দ্বারা পরিচালিত হয়।

গণতান্ত্রিক সংবিধান ঃ সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে গণতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ্য করা যায়, তাই এই দেশের সংবিধানকে গণতান্ত্রিক সংবিধান বলা যায়। অন্যান্য অনেক গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানের তুলনায় সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে গণতান্ত্রিকতা অনেক বেশি সুস্পষ্ট এবং সহজ-সরল। কারণ সংবিধান সংশোধন করতে গেলে এখানে 'গণভোট' ও 'গণউদ্যোগ' ব্যবস্থার অস্তিত্ব আছে। 

যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত ঃ সুইজারল্যান্ডের বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় নয়। কিন্তু এখানে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত আছে। যার নাম 'যুক্তরাষ্ট্রীয় ট্রাইবিউনাল'। যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনের ব্যাপারে ট্রাইবিউনাল কখনও হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

ধর্মনিরপেক্ষতা ঃ সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও স্বাধীনতার কথা স্বীকৃত হয়েছে। তাই এদিক থেকে বিচার করলে সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে, অর্থাৎ সুইজারল্যান্ড একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। 

Post a Comment

Previous Post Next Post