ভিয়েনা সম্মেলনের সপক্ষে যুক্তি দাও

ভিয়েনা সম্মেলনের সপক্ষে যুক্তি -


লাইপজিগের যুদ্ধে মিত্রশক্তি তথা চতুর্থ শক্তিজোটের কাছে নেপোলিয়নের পতন ঘটলে বিজয়ী শক্তিবর্গ ইউরোপের পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে একটি সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই সম্মেলন ভিয়েনা সম্মেলন নামে পরিচিত। নিন্মে ভিয়েনা সম্মেলনের সপক্ষে যুক্তি দেওয়া হল -

শান্তি স্থাপন ঃ একটানা বিপ্লব, যুদ্ধ হওয়ার ফলে ইউরোপের শান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপবাসী শান্তি স্থাপনের আশায় আকুল হয়ে উঠেছিল। ভিয়েনা সম্মেলন ইউরোপে অন্তত চল্লিশ বছর শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই সময়ে ইউরোপে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদির অগ্রগতি ঘটেছিল।

আধুনিক ভাবধারা ঃ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, এই সময় গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি আধুনিক ভাবধারা খুব কম লোকই বুঝত। ফলে সেযুগের ভিয়েনা সম্মেলনের কর্তারা এসব ভাবধারাকে উপেক্ষা না করে ইউরোপের উন্নতিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

উদারতা ঃ মনে করা হয় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ভিয়েনা সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলি ইউট্রেক্টের সন্ধি (১৭১৩ খ্রিস্টাব্দ), ভার্সাই (১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ) প্রভৃতির চেয়ে অনেক উদার ছিল। ফলে এই সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলিতে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ বা অশান্তির বীজ লুকিয়ে ছিল না। অধ্যাপক হবসবমের মতে, ভিয়েনা চুক্তি ছিল 'বাস্তবোচিত' এবং 'যুক্তিসম্মত'।

আন্তর্জাতিকতা ঃ ভিয়েনা সম্মেলন আন্তর্জাতিকতাবাদের সূচনা করে। এর ভিত্তিতেই পরবর্তীকালে জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠন করা হয়েছিল।

মূল্যায়ন ঃ ভিয়েনা সম্মেলনের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, একথা ঠিক। কিন্তু এর সাথে সাথে এটাও ঠিক যে ভিয়েনা সম্মেলন ইউরোপকে দীর্ঘদিনের জন্য যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। ভিয়েনা সম্মেলন ইউরোপে চল্লিশ বছরের জন্য ইউরোপে শান্তি বজায় রাখতে পেরেছিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post