প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করব "ভাইমার প্রজাতন্ত্র কি" / "ভাইমার প্রজাতন্ত্র কাকে বলে"/ "ওয়েমার প্রজাতন্ত্র কাকে বলে" / "ভাইমার প্রজাতন্ত্রের কার্যাবলী" / "ভাইমার প্রজাতন্ত্র কী" / "ভাইমার প্রজাতন্ত্র বলতে কি বোঝ" -এই প্রশ্নটি।
ভাইমার প্রজাতন্ত্র বা ওয়েমার প্রজাতন্ত্র -
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষপর্বে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির আত্মসমর্পণের কিছুকাল পরেই ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম পদত্যাগ করেন এবং সপরিবারে তিনি হল্যান্ডে পালিয়ে যান। এই সময় ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবীরা 'সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি'র নেতা ফ্রেডারিখ ইবার্ট-এর নেতৃত্বে জার্মানিতে অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। জার্মানির রাজধানী বার্লিনে গোলযোগের কারণে নিকটবর্তী ওয়েমার শহরে গণপরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা মিলে গণপ্রজাতন্ত্রী জার্মানির জন্য একটি সংবিধান রচনা করেন এবং এখানেই এই সরকারের কর্মকেন্দ্র স্থাপিত হয়। জার্মানির ভাইমার বা ওয়েমার নামক স্থানে সংবিধানটি রচিত হয়েছিল বলে জার্মানির এই নতুন সংবিধানের নাম হয় ‘ভাইমার সংবিধান’ এবং এই প্রজাতন্ত্র সারাদেশে 'ভাইমার প্রজাতন্ত্র' বা 'ওয়েমার প্রজাতন্ত্র' নামে পরিচিত হয়। ১৯১৮ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানিতে 'ভাইমার প্রজাতন্ত্র' টীকে ছিল, কিন্তু কিছু কারণে শেষ পর্যন্ত এই গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের পতন ঘটে। ভাইমার প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি পল ভন হিন্ডেনবার্গ ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে, জার্মানির চ্যান্সেলর পদে এডলফ হিটলারকে নিয়োগ করেন। এরপর ধীরে ধীরে হিটলারের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বাড়তে থাকে। ফলে জার্মানিতে একটি নতুন মতবাদের জন্ম হয়, যার নাম ‘নাৎসিবাদ’।
ভাইমার প্রজাতন্ত্র বা ওয়েমার প্রজাতন্ত্রের কার্যাবলী -
জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হওয়ার পর এই প্রজাতান্ত্রিক সরকার বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করেছিল। যেমন -
কমিউনিস্টদের দমন ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানিতে কমিউনিস্ট মতবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কমিউনিস্টরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মঘট এবং বিদ্রোহ শুরু করলে ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকার কমিউনিস্টদের এই বিদ্রোহগুলিকে দমন করেছিল।
জাতীয় পরিষদ গঠন ঃ নবগঠিত এই প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ওয়েমার শহরে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসে।
প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান ঃ প্রজাতান্ত্রিক সরকার সারা দেশের জন্য একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান চালু করেছিল। সংবিধান অনুসারে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন ফ্রেডরিখ ইবার্ট। এই সরকার দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করেছিল।
মূল্যায়ন ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে আর্থিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব ইত্যাদি সমস্যা ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ভীতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এপ্রসঙ্গে ইচ. এইচ. কার বলেছেন, ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকারের শাসনকালে ভার্সাই সন্ধির চেয়ে মুদ্রাস্ফীতি জার্মানির পক্ষে বেশি বিপদজনক ছিল।
আরও পড়ুন ঃ
১. ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতনের কারণ কি ছিল