প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকালের গুরুত্ব -
গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের পুত্র প্রথম কুমারগুপ্ত পিতার মৃত্যুর পর ৪১৫ খ্রিস্টাব্দে গুপ্ত বংশের সিংহাসনে বসেছিলেন। প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকালের ১৪ টি লিপি থেকে প্রথম তাঁর শাসনকাল কার্যাবলী সম্পর্কে বিশদে জানা যায়। নিন্মে প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকালের গুরুত্ব তুলে ধরা হল -
সাম্রাজ্যের প্রসার ঃ গুপ্ত সম্রাট প্রথম কুমারগুপ্ত তাঁর পূর্ববর্তী সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মতই গুপ্ত সাম্রাজ্যকে অটুট রেখেছিলেন। তিনি বেশ কিছু অঞ্চল জয় করে সাম্রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি ঘটিয়েছিলেন। প্রথম কুমারগুপ্ত দক্ষিণ ভারতের নর্মদা নদীর তীরবর্তী জঙ্গলে ঢাকা অঞ্চলটি জয় করেছিলেন। তিনি ‘ব্যাঘ্রবল পরাক্রম’ উপাধি নিয়েছিলেন।
সাম্রাজ্য রক্ষায় প্রথম কুমারগুপ্ত ঃ প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকালের শেষদিকে পুষ্যমিত্র জাতি ও দক্ষিণ ভারতের বাকাটক রাজ্য মিলিতভাবে গুপ্তদের ওপর আক্রমণ করে। প্রথম কুমারগুপ্ত এই জোট আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং এই জোটকে পরাজিত করেছিলেন তাঁর পুত্র স্কন্দগুপ্ত।
উন্নত শাসনব্যবস্থা প্রচলন ঃ শাসক হিসাবে প্রথম কুমারগুপ্ত যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে। তাঁর শাসনকালে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় ছিল এবং আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল। জনহিতকর কার্যাবলী, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রথম কুমারগুপ্তের অনন্য পরিচয়। ধর্মীয় ক্ষেত্রেও তিনি সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ করেন, তিনি জৈন ধর্মের ২৩ তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের মূর্তি নির্মাণ করেন। এছাড়া তিনি কার্তিকের মন্দির, সূর্যমন্দির প্রভৃতি নির্মাণ করেন। শিক্ষার উন্নতিতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বৈষ্ণব ধর্মের অনুরাগী প্রথম কুমারগুপ্ত ‘পরম ভাগবত’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।
মূল্যায়ন ঃ প্রথম কুমারগুপ্ত ৪১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৪৫৫ খ্রিস্টাব্দের এই ৪০ বছরের সময়কালে গুপ্ত সাম্রাজ্যকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাম্রাজ্য অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি তিনি শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে পেরেছিলেন। এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন, গুপ্ত সম্রাট প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকালে গুপ্ত সাম্রাজ্যের গৌরব সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছিল।
আরও পড়ুন -