প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব "ঋক বৈদিক যুগের সামাজিক জীবন কেমন ছিল" -এই প্রশ্নটি।
ঋক বৈদিক যুগের সামাজিক জীবন -
প্রাচীন বৈদিক যুগকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - ঋগবৈদিক যুগ ও পরবর্তী বৈদিক যুগ। ঋগবৈদিক যুগের সময়কাল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। নিন্মে ঋগবৈদিক যুগের সামাজিক জীবন কেমন ছিল তা আলোচনা করা হল -
পরিবারপ্রথা ঃ ঋগ বৈদিক যুগের সমাজের মূল ভিত্তি ছিল পরিবার, পরিবারগুলি মূলত একান্নবর্তী পরিবার ছিল। পরিবারের সমস্ত সদস্যরা একটি বাড়িতেই থাকত। ঋক বৈদিক যুগে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের অস্তিত্ব ছিল। পরিবারগুলি পরিচালিত হত গৃহকর্তা দ্বারা পুত্র সন্তানের বিশেষ গুরুত্ব ঋক বৈদিক যুগে অনুভব করা যায়। পুত্র সন্তান লাভের আশায় ঈশ্বরের কাছে বিভিন্নভাবে কামনা করা হত। এই সময় অতিথিদের বিশেষভাবে যত্ন করা হত, অতিথিদের দেবতা জ্ঞানে মানা হত।
খাদ্য ঃ ঋগবৈদিক যুগে আর্য জাতিই ছিল প্রধান। বিভিন্ন শাক-সবজি, মাংস, ফল, দুধ ইত্যাদি তারা খাদ্য হিসাবে আহার করত। গোমাংসও খাদ্য রুপে গ্রহণ করা হত, তবে সেটা সকলে করত না। ঋক বৈদিক যুগে ‘সোম’ ও ‘সুরা’ নামক পানীয় মাদক দ্রব্য হিসাবে পাওয়া যেত।
পোশাক-পরিচ্ছদ ঃ ঋক বৈদিক যুগে পোশাকের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের প্রায় একইরকম ধরণ ছিল। এই সময় পোশাক ছিল দুটি ভাগে বিভক্ত। শরীরের নিন্ম ভাগে পরিধান করা পোশাক ছিল ‘বাস’ এবং শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গে পরিধান করা পোশাক ছিল ‘অধিবাস'। তাছাড়া 'নিবি' নামের এক ধরণের পোশাক ছিল যা অন্তর্বাস হিসাবে ব্যবহার করা হত।
নারীদের অবস্থা ঃ ঋগবৈদিক যুগে নারীদের অবস্থা উন্নত ছিল। এই সময় পুত্র সন্তান কামনা করা হলেও, কন্যা সন্তানকে অবহেলার চোখে দেখা হত না। কন্যা সন্তান এবং পুত্র সন্তানের মধ্যে কোন ভেদ ছিল না। বিবাহের ক্ষেত্রেও নারীরা যথেষ্ট স্বাধীনতা পেত, তারা তাদের পছন্দমত ছেলেদের বিয়ে করতে পারত। ঋক বৈদিক সমাজে বিধবাবিবাহ, বাল্য বিবাহ, পর্দাপ্রথা, বহুবিবাহ প্রভৃতির মত কুপ্রথাগুলি ছিল না। এই সময় নারীদের বিভিন্ন স্বাধীনতা থাকলেও কোন আইনি অধিকার ছিল না। এই সময় বহু নারী শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন বিদুষী নারী হলেন অপালা, ঘোষা, লোপামুদ্রা, বিশ্ববারা প্রমুখ।
জাতিভেদপ্রথা ঃ ঋগবৈদিক যুগে জাতিভেদপ্রথার অস্তিত্ব ছিল না। তবে বর্ণের ভিত্তিতে মানুষকে আর্য ও অনার্য - এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হত। এই সময় সকলে নিজেদের পছন্দমত পেশা বেছে নিত এবং কোন জীবিকাই বংশানুক্রমিক ছিল না। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে ঐতিহাসিকরা ঋগবৈদিক সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য শূদ্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে পেয়েছেন।
আরও পড়ুন ঃ
১. সিন্ধু সভ্যতার আর্থসামাজিক জীবন কেমন ছিল