গুপ্ত যুগের সাহিত্যের বিকাশ -
গুপ্ত যুগকে ভারতীয় ইতিহাসের সুবর্ণ যুগ বলা হয়। গুপ্ত যুগে সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সাহিত্যেরও উন্নতি ঘটে। গুপ্ত রাজারা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক হওয়ায় এই সময় সাহিত্যের অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছিল। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় নবরত্ন অর্থাৎ নয়জন পণ্ডিত, সংস্কৃত সাহিত্যের প্রভুত উন্নতি ঘটিয়েছিলেন। যার ফলে গুপ্ত যুগকে ‘সংস্কৃত সাহিত্যের স্বর্ণযুগ’ বলা হয়।
ধর্মীয় সাহিত্য ঃ বৈদিকযুগের পুরাণগুলি গুপ্তযুগে পরিবর্তন হয়। কাত্যায়ন, পুলস্ত্য, হারীত প্রমুখ লেখকেরা এই সময় বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্র রচনা করেন। ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ গুপ্ত যুগে রচিত হয়েছিল। যেমন - পরাশর স্মৃতি, নারদস্মৃতি ভাষ্য, কামন্দকের নীতিসার গ্রন্থ প্রভৃতি।
সংস্কৃত সাহিত্যের বিকাশ ঃ গুপ্ত যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি মহাকবি কালিদাস সে যুগের সাহিত্যকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন। রঘুবংশম্, মেঘদূতম্, কুমারসম্ভবম্, ঋতুসংহার, অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ প্রভৃতি কালিদাসের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। গুপ্ত যুগে অন্য একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন ভারবি। তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ কিরাতার্জুনীয়ম্। এছাড়া কবি মাঘের লেখা শিশুপালবধ কাব্য, কবি বুদ্ধ ঘোষ রচিত পদ্যচূড়ামণি প্রভৃতি গুপ্ত যুগের উল্লেখযোগ্য সংস্কৃত সাহিত্য।
কবিতা ও নাটক ঃ গুপ্ত যুগে একশটি স্তবক-সহ ‘শতক’ নামে এক নতুন ধরণের কবিতার ধরণ দেখা যায়। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ভর্তৃহরি রচিত শৃঙ্গার শতক এবং নীতি শতক। কবিতা ছাড়াও গুপ্ত যুগে বহু নাটক রচিত হয়েছিল যেমন - বিশাখদত্ত রচিত মুদ্রারাক্ষস ও দেবীচন্দ্রগুপ্তম্। ভবভূতির লেখা মহাবীরচরিত ও উত্তর রামচরিত। এছাড়া ভট্ট নারায়নের লেখা বেণীসংহার নাটক, দন্ডিনের লেখা দশকুমারচরিত, সুবন্ধুর লেখা বাসবদত্তা প্রভৃতি গ্রন্থগুলি গুপ্তযুগের এক অন্যান্য সৃষ্টি।
গুপ্তযুগে ছন্দ, ব্যাকরণ ও বিজ্ঞান বিষয়ক বহু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। যেমন - উল্লেখযোগ্য ব্যাকরণ গ্রন্থ অমরসিংহ রচিত অমরকোষ, চন্দ্রগোমিনের লেখা ব্যাকরণ প্রভৃতি। এছাড়া গ্রহ, নক্ষত্র ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক আর্যভট্টের সূর্যসিদ্ধান্ত, বরাহমিহিরের পঞ্চসিদ্ধান্তিকা প্রভৃতি গ্রন্থগুলি গুপ্ত যুগের বিশেষ উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক পরিচয় বহন করে।
আরও পড়ুন -