গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কি

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস থেক "গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কি" - এই প্রশ্নটি।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কি -

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কি ? তা নিয়ে পণ্ডিত মহলে বিতর্ক রয়েছে। ঐতিহাসিকেরা গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের বিভিন্ন কারন উল্লেখ করেছেন। কেউ বৈদেশিক আক্রমণের কথা বলেছেন আবার কেউ রাজপরিবারের অন্তঃকলহকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী করেছেন, কেউ প্রাদেশিক কর্মচারীদের ক্ষমতাবৃদ্ধিকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন। তবে ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মার মতে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের আসল কারণ হল সামন্ত প্রথার বিকাশ। বিভিন্ন বিতর্কের কারণে নির্দিষ্ট একটি কারণকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসাবে দায়ী করা যায় না। তবে যে কারণ গুলিকে অধিকাংশ পণ্ডিত গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ বলে সমর্থন করেন সেগুলি হল -

গুপ্তদের সামরিক দুর্বলতা ঃ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের পর থেকেই গুপ্তদের যুদ্ধনীতিতে পরিবর্তন আসে কারণ রাজারা যুদ্ধনীতির পরিবর্তে সাহিত্য, ধর্মচর্চার দিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। গুপ্ত রাজারা বৌদ্ধ ধর্ম, বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে যুদ্ধনীতি ভুলে গিয়েছিলেন। এইভাবে তারা অহিংসার অনুরাগী হয়ে পড়লে সেনাবাহিনীর দিকে গুপ্ত রাজাদের নজর কমে আসে। গুপ্ত যুগে সামন্ত রাজাদের ওপর সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী নির্ভর করত ফলে কেন্দ্রীয় সামরিক শক্তি ছিল দুর্বল প্রকৃতির। এই সামরিক দুর্বলতার সুযোগেই বিদেশি শক্তিগুলি গুপ্ত সাম্রাজ্য আক্রমণের পথ খুঁজে পায়।

যোগ্য শাসকের অভাব ঃ প্রথম কুমারগুপ্ত এবং স্কন্দগুপ্তের পর আর কোন শক্তিশালী গুপ্ত রাজার আবির্ভাব ঘটেনি। ফলে গুপ্ত সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার মত যোগ্য শাসকের অভাব দেখা যায়। যোগ্য শাসকের অভাবে বুধগুপ্তের পর গুপ্ত সাম্রাজ্য ক্রমশ পতনের দিকে এগোতে থাকে। তাই বলা যায়, যোগ্য শাসকের অভাবই গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ডেকে আনে।

রাজপরিবারে অন্তঃকলহ ঃ স্কন্দগুপ্তের পর গুপ্ত সাম্রাজ্যের সিংহাসন দখলকে কেন্দ্র করে গুপ্ত রাজপরিবারে অন্তঃকলহের সৃষ্টি হয়। এরফলে গুপ্ত রাজতন্ত্রের ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সম্রাট বুধগুপ্তের সময়কালেই বালাগুপ্ত, বৈন্যগুপ্ত, ভানুগুপ্তের মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দেয়, যা গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসাবে দায়ী।

অর্থনৈতিক কারণ ঃ অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর কোন সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব অনেকাংশে নির্ভরশীল। গুপ্ত রাজারা এক সময় ব্রাহ্মণদের প্রচুর জমি নিষ্কর জমি দান করতেন। ধীরে ধীরে রাজকর্মচারীদের বেতনের পরিবর্তেও নিষ্কর জমি দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হল। ফলে এই সব জমির রাজস্ব কোষাগারে জমা না পড়ায় রাজার আয় কম হত। তাছাড়া স্কন্দগুপ্তের শাসনকালে মালব অঞ্চল গুপ্তদের হাতছাড়া হওয়ার ফলে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এরফলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেনাবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ, দৈনন্দিন জীবন কাটানো প্রভৃতির জন্য গুপ্ত রাজারা অর্থের অভাব বুঝতে পারে। তাই বলা যায়, অর্থনৈতিক সংকট গুপ্ত সাম্রাজ্যকে পতনের দিকে ঠেলে দেয়।

সামন্তপ্রথার প্রভাব ঃ ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মা গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সামন্তপ্রথার বিস্তারকে দায়ী করেছেন। গুপ্ত যুগে সামন্ত রাজাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গুপ্ত প্রশাসন ও বিচার তাদের অংশগ্রহণ গুপ্ত রাজাদের দুর্বলতা প্রকাশ করে। বুধগুপ্তের পরবর্তীকালে সামন্ত রাজারা গুপ্ত রাজস্ব ও বিচার ব্যবস্থায় সম্পূর্ণভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। এইভাবে সামন্তপ্রথা গুপ্ত সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

বৈদেশিক আক্রমণ ঃ গুপ্তযুগে একের পর এক বৈদেশিক আক্রমণ এই সাম্রাজ্যকে যথেষ্ট নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রথম কুমারগুপ্তের আমলে পুষ্যমিত্রদের আক্রমণ, স্কন্দগুপ্তের আমলে হুন আক্রমণ, বুধগুপ্তের আমলে বাকাটকদের আক্রমণ প্রভৃতির ফলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। এইসব বৈদেশিক আক্রমণের সুযোগেই সামন্ত রাজারা স্বাধীন হয়ে যায়। গুপ্ত রাজাদের অঙ্গচ্ছেদের পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষ অবধি জীবিত গুপ্তের মৃত্যুর পর গুপ্ত সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ পতন ঘটে।

মূল্যায়ন ঃ উপরে উল্লিখিত প্রতিটি কারণই গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সমভাবে দায়ী। তবে একথা বলা যায় যে, সময়ের সাথে সাথে যেমন গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল, তেমনই তার পতন ঘটেছে।

আরও পড়ুন -

Post a Comment

Previous Post Next Post